যুদ্ধবিরতির পরেও ইসরায়েলি অবরোধ, খাদ্য-ঔষধসহ নানা সংকটে ফিলিস্তিনিরা
সোমবার, ৩ নভেম্বর, ২০২৫ ১১:৫৩ এএম | আপডেট: সোমবার, ৩ নভেম্বর, ২০২৫ ১১:৫৩ এএম
                        ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও মানুষের দুর্ভোগ কোনোভাবেই কমেনি। ইসরায়েলের কড়া অবরোধে খাদ্য, জ্বালানি, ওষুধ ও আশ্রয়ের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ক্ষুধা, শীত আর বোমা হামলার আতঙ্কে এখন গাজা পরিণত হয়েছে এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ে।
আজ সোমবার (৩ নভেম্বর) আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ঘোষিত যুদ্ধবিরতির পরও গাজায় ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত রয়েছে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতির এক মাসে অন্তত ২৩৬ ফিলিস্তিনি নিহত ও ৬০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। ইসরায়েলি বাহিনীর এই আগ্রাসন ও অবরোধ গাজার মানুষকে নিঃস্ব করে ফেলছে, যেখানে হাজারো পরিবার ধ্বংসস্তূপের নিচে ঠাঁই নিয়েছে বেঁচে থাকার আশায়।
গাজার হাসপাতালগুলো জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় তিনজন নিহত হয়েছেন এবং ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে আরও তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতি শুরুর পর থেকে ধসে যাওয়া ভবনের নিচ থেকে অন্তত ৫০০ ফিলিস্তিনির মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতরা মূলত দুই বছরের টানা বোমাবর্ষণ ও অবরোধের শিকার সাধারণ মানুষ।
রোববার রাতে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর জানিয়েছে, রেডক্রসের মাধ্যমে তারা তিনজন ইসরায়েলি বন্দির মৃতদেহ গ্রহণ করেছে। যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী, প্রতিটি ইসরায়েলি বন্দির মৃতদেহের বিনিময়ে ইসরায়েলকে ১৫ জন মৃত ফিলিস্তিনি বন্দির মৃতদেহ ফেরত দিতে হবে। এই বিনিময় প্রক্রিয়া চলমান থাকলেও, গাজায় হামলা ও মানবিক সংকটের কোনো দৃশ্যমান পরিবর্তন হয়নি।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম) সম্প্রতি অভিযোগ করেছে, হামাস দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস এলাকায় একটি ত্রাণবাহী ট্রাক লুট করেছে। তবে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন না করেই একটি ড্রোন ফুটেজের বরাত দিয়ে তারা দাবি করে, “হামাস সদস্যরা মানবিক সহায়তা দখল করেছে।”
গাজার সরকারি গণমাধ্যম কার্যালয় এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও সাজানো বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়, “এটি একটি পরিকল্পিত প্রচারণা, যার উদ্দেশ্য ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে কলঙ্কিত করা।” আরও বলা হয়, “ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে ত্রাণ সরবরাহে বাধা দিচ্ছে, যাতে ক্ষুধা তৈরি করে গাজায় মানবিক বিপর্যয় ঘটানো যায়।”
ইসরায়েলি অবরোধের কারণে গাজার হাসপাতালগুলো এখন ভয়াবহ সংকটে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, ১৬ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি রোগী বিশেষায়িত চিকিৎসার অপেক্ষায় গাজায় আটকা রয়েছেন। সীমিত ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী থাকায় চিকিৎসকরা প্রতিদিন জীবন-মৃত্যুর লড়াই করছেন।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মিসর প্রায় ৪ হাজার আহত ফিলিস্তিনিকে চিকিৎসার জন্য গ্রহণ করেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত নিয়েছে ১,৪৫০ জন, কাতার ৯৭০ জন, তুরস্ক ৪৩৭ জন, এবং ইউরোপে সর্বাধিক ২০১ জনকে চিকিৎসা দিয়েছে ইতালি। তবে এখনো ৩,৮০০ শিশুসহ হাজারো রোগী বিদেশে চিকিৎসার অপেক্ষায় রয়েছে।
 
আরও পড়ুন
- নরেন্দ্র মোদিকে "খুনি" আখ্যা দিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প
 - গাজায় ফের ‘শক্তিশালী’ হামলা চালনোর নির্দেশ নেতানিয়াহুর
 - ৬.১ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে কাঁপল তুরস্ক
 - যুদ্ধবিরতির পরেও ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত
 - যুদ্ধবিরতির পরও ইসরায়েলি হামলায় ৯৩ ফিলিস্তিনি নিহত
 - পশ্চিম তীর দখলের বিল পাসের বিরোধীতায় যুক্তরাষ্ট্র-সৌদি আরব-কাতার
 - উগান্ডায় ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৪৬
 - জাপানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী তাকাইচি