যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন : ইসরায়েলি হামলায় ৭ শিশুসহ ১১ জন নিহত
রবিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২৫ ১১:৪৪ এএম | আপডেট: রবিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২৫ ১১:৪৪ এএম

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় আবারও রক্ত ঝরল—ইসরায়েলের সর্বশেষ হামলায় একই পরিবারের ১১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ছিল সাত শিশু ও তিনজন নারী। মাত্র আট দিন আগে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতির পরই এই ভয়াবহ হামলা গাজার মানুষের মধ্যে গভীর শোক ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
আজ রোববার (১৯ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
আল জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় গাজা সিটির জায়তুন এলাকায় আবু শাহবান পরিবারের বেসামরিক একটি গাড়িতে ট্যাংক থেকে নিক্ষেপ করা ইসরায়েলি গোলা সরাসরি আঘাত হানে। হামলার পরপরই ঘটনাস্থলেই সবাই মারা যান। তারা তাদের বাড়ির ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থা দেখতে যাচ্ছিলেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় সূত্র। এই হামলা যুদ্ধবিরতির মাত্র আট দিন পর সংঘটিত হয়, যা কার্যত চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে মনে করা হচ্ছে।
গাজার সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল বলেন, নিহতদের অধিকাংশই শিশু ও নারী।
তিনি জানান, “তাদের সতর্ক করা যেত বা বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যেত, কিন্তু যা ঘটেছে তা প্রমাণ করে ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী এখনো বেসামরিকদের ওপর নির্মমতা চালিয়ে যাচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, “এই হামলা যুদ্ধবিরতির চেতনার সম্পূর্ণ পরিপন্থী, এবং এটি মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ।”
গাজার সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক কার্যালয় (ওসিএইচএ)-এর সহায়তায় নয়জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে দুটি শিশুর মরদেহ এখনো নিখোঁজ, কারণ বিস্ফোরণের তীব্রতায় তাদের দেহাবশেষ ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। ঘটনাস্থল এতটাই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে যে উদ্ধারকাজে থাকা স্বেচ্ছাসেবীরাও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন।
হামাস এই ঘটনাকে “গণহত্যা” হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। এক বিবৃতিতে সংগঠনটি জানিয়েছে, কোনো সামরিক কারণ ছাড়াই বেসামরিক পরিবারকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে, যা সরাসরি যুদ্ধবিরতির চুক্তি ভঙ্গের সমান। হামাস যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে—ইসরায়েলের ওপর যুদ্ধবিরতি মেনে চলার জন্য আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগ করতে।
গাজার মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, চলমান বন্দি বিনিময় চুক্তির মধ্যেও ইসরায়েলি বাহিনী হামলা চালিয়ে শনিবার পর্যন্ত অন্তত ৩৮ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। শুধু প্রাণহানি নয়, খাদ্য ও চিকিৎসাসহ জরুরি সহায়তার প্রবাহও কঠোরভাবে সীমিত রাখা হচ্ছে। এর ফলে গাজার অসংখ্য পরিবার ক্ষুধা, অপুষ্টি ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে দিন কাটাচ্ছে।
জাতিসংঘ সম্প্রতি সতর্ক করেছে, গাজার দুর্ভিক্ষকবলিত অঞ্চলে ত্রাণ কনভয় পৌঁছানো ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে। বর্তমানে উপত্যকার প্রায় অর্ধেক জনগণ—প্রায় ৪৯ শতাংশ—দৈনিক ছয় লিটারেরও কম পানযোগ্য পানি পাচ্ছেন, যা আন্তর্জাতিক মানবিক মানের অনেক নিচে। এ অবস্থায় শিশুদের পুষ্টিহীনতা ও পানিবাহিত রোগ দ্রুত বেড়ে চলছে।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি শুরুর পর থেকে তারা গড়ে দৈনিক ৫৬০ টন খাদ্য গাজায় পাঠাতে পেরেছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। সংস্থাটি বলছে, ন্যূনতম মানবিক চাহিদা পূরণ করতে অন্তত দ্বিগুণ খাদ্য সরবরাহ প্রয়োজন। কিন্তু ইসরায়েলি অবরোধের কারণে সীমান্ত দিয়ে সহায়তা প্রবেশ প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা
আরও পড়ুন
- হংকংয়ের কার্গো বিমান সমুদ্রে পরে নিহত ২
- কাতারের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত পাকিস্তান-আফগানিস্তান
- যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন : ৯ ফিলিস্তিনিকে গুলি করে হত্যা করল ইসরায়েলি বাহিনী
- ভারতীয় ৩টি কাশির সিরাপ নিয়ে ডব্লিউএইচও'র সতর্কবার্তা
- ইসরাইলি কারাগার থেকে মুক্তি পেল ৩ হাজার ৭০০ ফিলিস্তিনি
- মিসরে বিশ্ব নেতাদের উপস্থিতিতে গাজা শান্তিচুক্তি সই
- মেক্সিকোতে ভারী বর্ষণে সৃষ্ট বন্যায় ৪৪ জনের মৃত্যু
- ঢাকা আসছেন জাকির নায়েক