মৃত্যুঞ্জয়ী মাহেরিন চৌধুরী
সংবাদদাতা: আতিকুর রহমান রুমন সোমবার, ৪ আগস্ট, ২০২৫ ১২:১০ পিএম | আপডেট: সোমবার, ৪ আগস্ট, ২০২৫ ১২:১০ পিএম

কিছু মানুষ থাকেন, যারা চিরতরে নিভে যাওয়ার আগ মুহূর্তেই হয়ে ওঠেন অন্যের জীবনের আলোকবর্তিকা। তাদের মৃত্যু হয় না, তারা ছড়িয়ে পড়েন হাজারো হৃদয়ে—ভালোবাসা, ত্যাগ আর সাহসের এক অনন্ত প্রতিমূর্তি হয়ে। মাহেরিন চৌধুরী ছিলেন তেমনই এক বিরল মানুষ। তিনি ছিলেন শিক্ষক, কিন্তু তার শিক্ষাদান সীমাবদ্ধ ছিল না শুধু, শ্রেণিকক্ষের ভেতরে ছড়িয়ে ছিল জীবনের প্রতিটি স্তরে মানবতা, মমতা ও আত্মত্যাগের ভাষায়। বিপদের মুহূর্তে নিজের জীবনকে অস্তিত্বহীন করে দিয়ে যিনি বাঁচিয়ে গেলেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে, তিনি মাহেরিন চৌধুরী। তার হৃদয়ে ছিল অসীম মাতৃত্ব, তার সত্তায় ছিল এক অপ্রতিরোধ্য আত্মপ্রত্যয় আর সাহসিকতায় ছিল এক অতুলনীয় শক্তি। শিশু শিক্ষার্থীদের প্রতি তার স্নেহ ছিল এমন, যেন তারা সবাই তার নিজের সন্তান। তাই মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েও তিনি ছিলেন অটল, অচঞ্চল, এক অদম্য মানবপ্রাচীর। এতসব গুণের পাশাপাশি মাহেরিন চৌধুরী ছিলেন একটি ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিচয়।
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাতিজি, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের চাচাতো বোন—এই পরিচয় তিনি জীবদ্দশায় লুকিয়ে রাখতেন। যেখানে অন্যরা রাজনৈতিক পরিচয় সবসময় সামনে নিয়ে আসেন। রাজনৈতিক পরিচয়ের আড়ালে স্বার্থ খোঁজেন এবং একসময় আঙুল ফুলে কলাগাছ হন, সেখানে মাহেরিন চৌধুরী ছিলেন নীরব, সাদামাটা এবং দায়িত্ববোধে পূর্ণ এক মানুষ। ক্ষমতা, লোভ—এগুলো তাকে স্পর্শ করত না। তিনি ছিলেন আদর্শের জীবন্ত উদাহরণ একজন শিক্ষিকা, যিনি নৈতিকতা আর নিষ্ঠাকে জীবনের ধ্রুবতারা বানিয়ে নিয়েছিলেন। নির্লোভ ও পরোপকারী এই মহীয়সী নারী সবার হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন এবং স্যালুট তোমাকেই—হে মানুষ গড়ার কারিগর।
এই নিবন্ধে আমরা ফিরে দেখব, সেই মহান নারীর জীবনগাথা, যার আত্মদানের আলো নিভে গেলেও রেখে গেছেন এক উজ্জ্বল মানবিক সূর্যোদয়।
গত ২১ জুলাই উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনে বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান উড্ডয়নের ১২ মিনিটের মধ্যে বিধ্বস্ত হয়। আছড়ে পড়ে স্কুলভবনের ওপর। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) সূত্রে জানা যায়, বিমান বাহিনীর এফ-৭ বিজিআই প্রশিক্ষণ বিমানটি ওইদিন দুপুর ১টা ৬ মিনিটে উড্ডয়ন করে। ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, প্রশিক্ষণ বিমানটি ১টা ১৮ মিনিটে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দোতলা একটি ভবনে বিধ্বস্ত হয়। বিধ্বস্তের পর বিমানটি বিল্ডিং ভেদ করে মাটির নিচে ঢুকে গিয়ে টুকরো টুকরো হয়ে যায় এবং বিস্ফোরণের ফলে চারদিকে আগুন ধরে গিয়ে শুরু হয় বিভীষিকা। এ দুর্ঘটনায় বৈমানিকসহ এখন পর্যন্ত নিহত মানুষের সংখ্যা ৩৫ জন হলেও দিন দিন সংখ্যা বাড়ছেই। এখনো আহতদের মধ্যে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৪৮ জন। এমন মৃত্যু সেদিন কাঁদিয়ে ছিল সারা দেশের মানুষকে।
মাহেরিন চৌধুরী। মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষিকা। ২১ জুলাই উত্তরা মাইলস্টোন স্কুলে বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমানটি যখন বিধ্বস্ত হয়, তখন সবে স্কুল ছুটি হয়েছে। ছুটি হওয়ার সময় মাহেরিন চৌধুরী গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থেকে প্রতিদিন বাচ্চাদের অভিভাবকদের হাতে বুঝিয়ে দেন। সেদিনও শিক্ষিকা মাহেরিন চৌধুরী বাচ্চাদের অভিভাবকদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন; কিন্তু সে সময় স্কুলভবনে ওিই প্রশিক্ষণ বিমানটি বিকট শব্দে আছড়ে পড়ে।
বিমানটি আছড়ে পড়ার পর চারদিকে আগুন ধরে যায়। তখনো সম্পূর্ণ অক্ষত ও সুস্থ ছিলেন শিক্ষিকা মাহেরিন চৌধুরী। তিনি বিপদ দেখে সরে পড়তে পারতেন, নিজেকে বাঁচানোর যথেষ্ট সময় ছিল তার; কিন্তু তিনি তা করেননি, নিজের সন্তানের মতো করেই বুক আগলে বাঁচাতে চেয়েছিলেন ছাত্রছাত্রীদের। ওই মুহূর্তে তিনি শুধু একজন শিক্ষক ছিলেন না, তিনি হয়ে উঠেছিলেন আশ্রয়, সাহস, ভালোবাসায় মূর্ত প্রতীক। তার চোখে ছিল না আতঙ্কের ছাপ, ছিল মাতৃস্নেহের দৃঢ়তা ও ভালোবাসার আকুতি; তার কণ্ঠে ছিল না আর্তনাদ, ছিল দায়িত্বের দায়ভার। সেটি ছিল এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত, যেখানে একজন শিক্ষক হয়ে ওঠেন অভিভাবক, বীরযোদ্ধা ও মুক্তির আশ্বাস।
মাহেরিন চৌধুরী আগুনের লেলিহান শিখার মধ্য দিয়েও একে একে ২০ জনেরও অধিক শিশু শিক্ষার্থীকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাচ্ছিলেন আর বলছিলেন—‘ভয় পেয়ো না, দৌড়াও সামনের দিকে, পেছনে তাকিও না। আমি আছি তোমাদের সঙ্গে।’
তিনি বাচ্চাদের যখন বের করছিলেন, ঠিক তখনই আরেকটি বিস্ফোরণ ঘটে আগুনের লেলিহান শিখা তীব্রতর হয় এবং তখন তিনি নিজেও আগুনে মারাত্মকভাবে ঝলসে যান।
দগ্ধ মাহেরিনকে দ্রুত ঢাকার জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। লাইফ সাপোর্টে নেওয়ার আগে স্বামী মনছুর হেলালের সঙ্গে মাহেরিনের শেষ কথা হয়। মনছুর হেলাল তাকে জিজ্ঞেস করলেন—‘কেন এ কাজ করতে গেলে, তোমারও তো দুটি সন্তান আছে?’ উত্তরে মাহেরিন বলেন, ‘আমার বাচ্চারা আমার সামনে সব পুড়ে মারা যাচ্ছে, আমি এটা কীভাবে সহ্য করি।’
মনছুর হেলাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘পা থেকে মাথা পর্যন্ত সব পুড়ে শেষ। শুধু বেঁচে ছিল, একটু কথা বলতে পেরেছে।’ তার শরীরের ১০০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল বলে আবাসিক সার্জন শাওন বিন রহমান জানান।
২০ জনেরও অধিক শিশু শিক্ষার্থীর প্রাণ বাঁচিয়ে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় দেশবাসীকে কাঁদিয়ে ২১ জুলাই রাতেই মারা যান মহীয়সী নারী মাহেরিন চৌধুরী। তার এবং ছোট ছোট শিশু শিক্ষার্থীদের মৃত্যুতে সারা দেশে শোকের ছায়া নেমে আসে।
৪২ বছর বয়সি মাহেরিন ছিলেন অত্যন্ত নরম স্বভাবের মানুষ। তিনি মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বাংলা মাধ্যমের শিক্ষক ছিলেন এবং শিক্ষার্থীদের কাছে তিনি ছিলেন খুবই মমতাময়ী।
উদ্ধারকাজে অংশ নেওয়া এক সেনা সদস্য বলছিলেন—‘ম্যাডাম একে একে বাচ্চাগুলো বের করে দিচ্ছিলেন কিন্তু নিজে আর বের হতে পারেননি। প্রায় ২০ জন শিক্ষার্থীকে বের করে দিলেও তিনি নিজেও গুরুতর আহত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।’
মাহেরিন চৌধুরীর সহপাঠী এবং প্রতিবেশী আলী আহসান মাবরুর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তার ফেসবুকে লেখেন—‘মাহেরিন আপা আমার মানারাতের সহপাঠী ছিলেন। আমরা একই সঙ্গে মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে মাস্টার্স করেছি। বয়সে আমার একটু সিনিয়র হবেন। বনেদি ঘরের মানুষ, তবে একদম সাদামাটাভাবে চলাফেরা করতেন। আমাকে ছোট ভাইয়ের মতো স্নেহ করতেন।’
তিনি উত্তরায় থাকতেন, সে হিসেবে আমার প্রতিবেশীও তিনি। উত্তরায় যখন হাতেগোনা কয়েকজন মানুষ ছিলেন, বেশির ভাগ অংশই যখন জলাভূমি ও গাছগাছালিতে পরিপূর্ণ, তখন থেকে এ এলাকায় তাদের বসতি। গত কয়েক বছরে মাহেরিন আপা প্রথমে তার বাবা এবং এরপর মাকেও হারালেন। পরিবারের বড় সন্তান হিসেবে সব ভাই-বোন বরাবরই তাকে অভিভাবক হিসেবেই গণ্য করতেন। তার ছেলে আছে দুটো, ওরাও বেশ বড় হয়ে গেছে।
মাহেরিন আপা অনেক বছর ধরে মাইলস্টোন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত। তাকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন শাখায় তারা কাজে লাগিয়েছে। আপা এখন সিনিয়র টিচার। সে হিসেবে বাড়তি কিছু দায়িত্বও ছিল তার দিয়াবাড়ি শাখায়।
২১ জুলাই যখন স্কুলের ওপর বিমানটি আছড়ে পড়ে, তিনি তার স্বভাবসুলভ মায়ের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। নিশ্চিত আগুনে পুড়ে যাওয়া থেকে কমপক্ষে ২০ জনেরও বেশি ছাত্রছাত্রীকে তিনি সেভ করেছেন। কিন্তু এই সাহসী ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে গিয়ে কখন নিজের জীবনকেই বিপন্ন করে ফেলেছেন, তা হয়তো তিনি বুঝতেও পারেননি।
মাহেরিন আপার শরীরের প্রায় পুরোটাই পুড়ে গিয়েছিল। যতক্ষণ জীবিত ছিলেন, অসম্ভব কষ্ট ও যন্ত্রণা সহ্য করেছেন। বারবার নাকি বলছিলেন, আমার বুক-পেট সব জ্বলে যাচ্ছে, আমি হয়তো আর বাঁচব না। তার লাশটা স্বাভাবিক দেহের মতো নেই। আগুনে পুড়ে অনেকটাই ভিন্ন রকম হয়ে গিয়েছিল।
লাশবাহী গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে পুরোনো অনেক স্মৃতিই মনে পড়ছিল। অত্যন্ত বেদনাদায়ক মৃত্যু। তার পরিবারের এটুকু সান্ত্বনা যে, তিনি তার জীবন দিয়ে অনেকগুলো বাচ্চার জীবন সেভ করে গেলেন। ব্যক্তিগতভাবে তিনি ফরজ আমল, ইবাদত করতেন বলেই জানি। নিয়মিত কোরআন পড়তেন।
তার এক শিক্ষার্থী আবেগভরা কণ্ঠে লিখেছে, ‘শিক্ষক শুধু পাঠ্যবই শেখান না, শেখান কীভাবে মানুষ হতে হয়। মাহেরিন ম্যাম ছিলেন সেই শিক্ষকদের একজন।’
মাহেরিন চৌধুরীর আরেকটি রাজনৈতিক পরিচয় ছিল, যা তিনি কখনো বড়াই করতেন না। তারেক রহমানকে ভাই দাবি করে দেওয়া মাহেরিন চৌধুরীর একটি বক্তব্যের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি মাহেরিন চৌধুরী। আমার বাবা মহিদুর রহমান চৌধুরী। আমার আরেকটা পরিচয় হলো—আমি তারেক রহমানের বোন, আমার চাচা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। আমি খুবই সামান্য একটা মানুষ। আমি একটা চাকরি করি।’
মহিদুর রহমান চৌধুরী যিনি এম আর চৌধুরী নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি ছিলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আপন খালাতো ভাই। রাষ্ট্রপতি জিয়ার মৃত্যুর পর তার পরিবারের পাশে ছিলেন এই মহিদুর রহমান।
জিয়া পরিবার আসলেই এমনই। বেঁচে থাকাকালে জিয়াউর রহমানের ভাইদের কেউ চিনত না! তার মৃত্যুর পর রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাইদের পরিচয় দেশের মানুষ জানতে পারেন। ঠিক তেমনই জিয়াউর রহমানের ভাতিজি হলেও মাহেরিন চৌধুরীর মৃত্যুর আগে কেউ ওনার পরিচয় জানত না কিন্তু বীরত্বের মৃত্যুর পর জানল। এর আগে কেউ জানতে পারেনি—বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া যখন অসুস্থ হতেন, মাহেরিন চৌধুরী তখন নিজে খোঁজখবর নিতে ব্যতিব্যস্ত থাকতেন। আওয়ামী লীগের শাসনামলে গ্রেপ্তারের ভয়ে বিএনপির বাঘাবাঘা নেতা যেখানে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে যেতে পারতেন না বা যেতে সাহস করতেন না, সেখানে মাহেরিন চৌধুরী যেতেন। বাইরের মানুষ তাকে চিনতেন তিনি মাইলস্টোন কলেজের কো-অর্ডিনেটর। অন্য পরিচয় তিনি সামনে আনেননি।
জুলাই-২৪ আন্দোলনের সময় মাহেরিন চৌধুরী তার পক্ষ থেকে রেখেছিলেন সর্বোচ্চ ভূমিকা। অথচ ৫ আগস্টের পর কোনো সুবিধা নিতে চেষ্টা না করে ফিরে গেছেন নিজের সেই শিক্ষকতা পেশায়। আজকের বাংলাদেশে যেখানে রাজনৈতিক পদ-পদবি মানেই সুবিধা ভোগের সুযোগ, সেখানে মাহেরিন চৌধুরী ছিলেন এক অনন্য ব্যতিক্রম।
এটি প্রমাণিত, জিয়া পরিবারের সদস্যরা নিজ যোগ্যতায় সবকিছু করেন, অন্যের সাহায্য নিতে তারা নারাজ। জিয়াউর রহমানের ভাইয়েরা যেমন কোনো সহযোগিতা নেননি, কাটিয়েছেন সাদামাটা জীবন। মাহেরিনরাও হয়তো নিজের আত্মসম্মানবোধের হানি কখনো হতে দেননি।
মাহেরিনের গ্রামের বাড়ি নীলফামারীর জলঢাকা পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বগুলাগাড়ি চৌধুরীপাড়া গ্রামে। তার গ্রামের মানুষজন জানান, তিনি একজন সাহসী এবং মানবিক মানুষ ছিলেন। তার এই আকস্মিক মৃত্যুতে এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মৃত্যুর পর তার জানাজায় ঢল নামে মানুষের। কেউ এসেছেন শুধু এক নজর দেখার আশায়, কেউ এসেছেন চোখের জলে বিদায় জানানোর জন্য।
মাহেরিন চৌধুরীর মৃত্যুতে শুধু দেশে নয়, শোক জানিয়েছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। এ ঘটনায় সাহসিকতার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের জীবন বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ হারানো শিক্ষিকা মাহেরিন চৌধুরীর আত্মত্যাগের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন তিনি। গত ২৩ জুলাই নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে আনোয়ার ইব্রাহিম লিখেছেন, ‘ঢাকায় একটি স্কুলে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার খবর শুনে আমার হৃদয় ভেঙে গেছে। এ ঘটনায় বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, যাদের অধিকাংশই শিশু। আহত হয়েছে শতাধিক।’
তিনি আরো লেখেন, ‘এই মর্মান্তিক ঘটনার শিকারদের মধ্যে ছিলেন শিক্ষক মাহেরিন চৌধুরী। যিনি তার শিক্ষার্থীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যান এবং পরে আরো শিক্ষার্থীকে বাঁচাতে সাহসিকতার সঙ্গে ধোঁয়া ও আগুনের মধ্যে ফিরে যান। তার অসীম সাহস ভোলা যাবে না।’
একদিকে যেমন স্বজন হারানোর আহাজারি, অন্যদিকে সমগ্র জাতি কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছে এই শিক্ষিকার আত্মত্যাগকে। মাহেরিন চৌধুরী আজ সাহস, মানবতা ও আত্মত্যাগের অনন্য প্রতীক। তিনি নেই কিন্তু তার বাঁচিয়ে দেওয়া শিক্ষার্থীদের মনে আর বাংলাদেশের ইতিহাসে তিনি চিরকাল বেঁচে থাকবেন এক উজ্জ্বল মানবিক অধ্যায় হয়ে।
সারা দেশের মানুষ, শিক্ষার্থী, সাংবাদিক, সহকর্মী সবাই একবাক্যে তাকে ‘বীর’ আখ্যা দিয়েছেন। তার মতো একজন আত্মপ্রত্যয়ী দুঃসাহসী শিক্ষক আমাদের মনে করিয়ে দেন, কিছু কিছু নাম সরকারি দপ্তরের খাতায় না উঠলেও মানবতার অন্তর্লিখিত ইতিহাসে ও সমসাময়িক মানুষের স্মৃতিতে চিরন্তন হয়ে থাকেন, সোনার হরফে লেখা হয়ে থাকে তাদের নাম। তেমনি মাহেরিন চৌধুরীর নামও সোনার হরফে লেখা থাকবে।
এই মহান শিক্ষিকার উদ্দেশে হৃদয়ের গভীর থেকে একটি বাক্যই উচ্চারণ করা যায়— ‘তারেক রহমানের বোন মাহেরিন চৌধুরী, আপনাকে জাতির পক্ষ থেকে অশ্রুসিক্ত স্যালুট।’
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, সদস্য, বিএনপি মিডিয়া সেল ও আমরা বিএনপি পরিবারের আহ্বায়ক
আরও পড়ুন
- বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ও কৃষির সংযোগ; প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কৃষি ভাবনা
- হাসিনা পালিয়ে দিল্লিতে, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক তলানিতে
- "প্রথম বাংলাদেশ-আমার শেষ বাংলাদেশ"
- ভারতের ৪৯ গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে ভুয়া খবর প্রচার
- ভারতের গোলামি করার জন্য স্বাধীনতা অর্জন করিনি : সোহেল তাজ
- সত্যের সৌন্দর্য হলো, ষড়যন্ত্রের ওপর বিজয় লাভ করে : তারেক রহমান
- অন্তর্বর্তী সরকারকে শক্ত হাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের আহ্বান তারেক রহমানের
- ওই আসছেন তারেক রহমান