1. »
  2. আইন আদালত

মেজর সিনহা হত্যা মামলা : চার বছর পর ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি আজ

বুধবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৫ ১১:৫২ এএম | আপডেট: বুধবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৫ ০৬:১৪ পিএম

মেজর সিনহা হত্যা মামলা : চার বছর পর ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি আজ

বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম আলোচিত ও বেদনাদায়ক একটি ঘটনা হলো অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানের নির্মম হত্যাকাণ্ড। ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঘটে যাওয়া এই মর্মান্তিক ঘটনার চার বছর পর আজ বুধবার (২৩ এপ্রিল) থেকে শুরু হচ্ছে উচ্চ আদালতে ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি। 

মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ হলেও, ভুক্তভোগী পরিবার ও সাধারণ মানুষের চোখে এখনো এই বিচার অসমাপ্ত। এখন হাইকোর্টে সেই বিচারিক রায়ের পর্যালোচনা ও আসামিদের আপিলের শুনানির মধ্য দিয়ে নতুন করে শুরু হচ্ছে ন্যায়বিচার পাওয়ার লড়াই।

২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজারের টেকনাফে মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর তল্লাশি চৌকিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন মেজর সিনহা। ঘটনার পরপরই পুলিশ সরকারি কাজে বাধা, অস্ত্র ও মাদক আইনে সিনহার সহযোগীদের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা দায়ের করে। এর পরদিন, সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস কক্সবাজার আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এই মামলার প্রধান আসামি ছিলেন বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ লিয়াকত আলী এবং দুই নম্বর আসামি ছিলেন টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় র‍্যাবকে। এরপর তদন্তে উঠে আসে ভয়াবহ এক চিত্র—সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে হত্যাকাণ্ড, প্রমাণ লোপাট ও অসত্য মামলা দায়েরের অভিযোগ।

মামলার বিচার চলে কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে। বিচারকাজ শুরু হয় ২০২১ সালের ২৭ জুন, এবং ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি আদালত রায় ঘোষণা করেন। রায়ে প্রদীপ ও লিয়াকতকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় এবং ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও সাতজনকে খালাস দেওয়া হয়। এরপর, ২০২২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ডেথ রেফারেন্সসহ পুরো মামলার নথি হাইকোর্টে পাঠানো হয় এবং আসামিরা পৃথকভাবে আপিল করেন রায় বাতিলের দাবিতে। কিন্তু মামলাটি দীর্ঘদিন পেপারবুক শাখায় পড়ে থাকায় শুনানির অগ্রগতি হয়নি।

অবশেষে আজ, হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মুস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি সগীর হোসেন লিয়নের বেঞ্চে শুনানি শুরু হচ্ছে। অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছ থেকে দ্রুত শুনানির আশ্বাস পাওয়ার পর মামলাটি অগ্রাধিকার তালিকায় এসেছে। এ নিয়ে সিনহার পরিবারের প্রত্যাশা, উচ্চ আদালতে এ মামলার সুষ্ঠু ও দ্রুত নিষ্পত্তি হবে। মামলার বাদী সিনহার বড় বোন বলেন, "ভুক্তভোগী পরিবার হিসেবে চাইবো মামলাটির বিচার দ্রুত শেষ হোক। আমরা সত্যের জয় চাই।"

এই মামলার সঙ্গে জড়িয়ে আছে শুধু একটি পরিবারের নয়, বরং পুরো জাতির ন্যায়বিচারের প্রত্যাশা। সেনাবাহিনীর সাবেক এক কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন শেষে ছুটিতে এসে এমন নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া আমাদের বিচারব্যবস্থার জন্য এক বড় পরীক্ষা। আজকের এই শুনানি সেই পরীক্ষারই নতুন অধ্যায়, যেখানে ন্যায় ও সত্যের পক্ষেই শেষ পর্যন্ত জয় হোক—এটাই প্রত্যাশা।