1. »
  2. শিল্প সাহিত্য

এবারের বইমেলায় নতুন বইয়ের সংখ্যা ছাড়াল দেড় হাজার

সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:৪১ পিএম | আপডেট: সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:৪১ পিএম

এবারের বইমেলায় নতুন বইয়ের সংখ্যা ছাড়াল দেড় হাজার

অমর একুশে বই মেলা। প্রতি বছর বাংলা একাডেমি কর্তৃক এ মেলার আয়োজন করা হয়। অমর একুশে বইমেলা শুরু হয় ১লা ফেব্রুয়ারীতে, যা চলে মাসজুড়ে। এবারো এর বিকল্প হয়নি। ১লা ফেব্রুয়ারীতে শুরু হয়ে এখনো চলছে। এ বছর মেলায় নানান নতুন বই জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।

মেলার তথ্যকেন্দ্র থেকে জানা গেছে, গতকাল রবিবার নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে ১০৪ টি ও মেলায় নতুন বইয়ের সংখ্যা এখন পর্যন্ত মোট ১হাজার ৫৩১ টি।

নতুন বইয়ের মোড়ক উম্মোচনের জন্য নিয়ম অনুযায়ী অন্তত একদিন আগে মেলার তথ্যকেন্দ্রের নির্ধারিত ফরম পূরণ করতে হয়। এরপর সিরিয়াল অনুযায়ী লেখক কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত স্থানে মোড়ক উম্মোচন করতে পারেন।  

একুশে বইমেলা ২০২৫ এর সময়সূচিতে বলা হয়েছে, ছুটির দিন ব্যতীত মেলা বিকেল ৩ টায় শুরু হয়ে রাত ৯টা পর্যন্ত চলে। আর ছুটির দিনে বেলা ১১ টায় শুরু হয়ে রাত ৯টা পর্যন্ত চলে। কিন্ত রাত ৮.৩০ মিনিটের পরে কেউ মেলায় প্রবেশ করতে পারবে না।

এবারের বইমেলায় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা মোট ৭০৮টি। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ৯৯টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৬০৯টি। মোট প্যাভিলিয়ন সংখ্যা ৩৭ টি। যার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ১ টি ও সহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৩৬টি। মোট ইউনিট সংখ্যা ১০৮৪টি। শিশু চত্বরে মোট প্রতিষ্ঠান ৭৮টি ও ইউনিট ১২০ টি।

মেলার আগত পাঠকরা তথ্য কেন্দ্রে কোন তথ্য বেশি খোঁজে জানতে চাইলে বলেন, মেলায় বই বা স্টলের চেয়েও মানুষ বেশি খোঁজে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার স্টিকারসহ ডাস্টবিনটি। মানুষ উল্লাস করে  ডাস্টবিনে ময়লা ফেলে এবং ছবি তোলে।

মেলায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অন্য প্রকাশ, ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ, মিজান পাবলিশার্সসহ বেশ কিছু স্টলে ভীড় করে বই কিনছেন পাঠকরা। 

বেশি বিক্রিত বইয়ের বিষয়ের চাইলে বিক্রেতা বলেন, হুমায়ুন আহমেদের 'দেয়াল' ও বৃষ্টি বিলাশ বেশি বিক্রয় হচ্ছে। নতুন লেখকদের মধ্য এবার জনপ্রিয়তা পেয়েছেন মৌরি মরিয়ম। তার প্রকাশিত বই 'এক হাজার টাকা' পাঠকদের নজর কেড়েছে। 

নতুন লেখকের মধ্য শানজানা আলমের 'নীলাঞ্জনা তখন' ও 'যখন ডুবেছিল সন্ধ্যা তারা' ভালো বিক্রয় হচ্ছে। এছাড়া মৃত্যু কখনো কখনো জরুরী হয়' জমসেদ নাজিমের বইটি পাঠকরা বেশ পছন্দ করছেন।

সাইফুল হসেনের ব্যবসায় সংক্রান্ত বই পারসনাল ফাইন্যন্স ম্যানেজমেন্ট ও দ্যা মিস্ট অব বিসিনেস ফেইলিওর এন্ড সাকসেস, মাহমুদুল আলমের অনুবাদক বই দ্যা এলক্যামিস্ট ও ফজল হাসাবের দ্যা হোয়াইট বুক পাঠকদের মন জয় করেছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।

এছাড়া জিয়া পরিবারকে নিয়ে লেখা অনেক বই মেলার বিভিন্ন স্টলে লক্ষ্য করা গেছে। কোন বই বেশি বিক্রয় হচ্ছে জানতে চাইলে দোকানি বলেন, এ বছর প্রায় সবগুলোই ভালো বিক্রয় হচ্ছে। এর মধ্য মাহফুজ উল্লাহর লেখা 'বেগম খালেদা জিয়া জীবন ও সংগ্রাম', ড. আ ন ম এহসানুল হক মিলনের 'প্রেসিডেন্ট জিয়া', 'বাংলাদেশের অহংকার তারেক রহমান' ড. কে এ এম সাহাদত হোসেন মন্ডলের সম্পাদনা করা বইগুলো তুলনামূলক বেশি বিক্রয় হচ্ছে। 

আগত পাঠকের কাছে এবারের মেলার অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে বলেন, "এবারের মেলায় এসে খুব ভালো লাগছে। এর আগে মেলা প্রাঙ্গণে ছাত্রলীগের মিছিল মিটিং করত, স্লোগান দিতো, দলে দলে ঘুরে বেড়াত। এবারের মেলায় এই সমস্যাগুলো হচ্ছে না, এ ছাড়াও মেলায় নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি অনেক বেশি সব মিলিয়ে মেলা উপভোগ করছি।"

একজন বিক্রেতার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "এবারের মেলায় তুলনামূলক পাঠকের আগমন কম। বইও আগের মতো বিক্রয় হচ্ছে না। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, দিন দিন মানুষ বই থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। সবাই ভার্চুয়াল লাইফে ব্যস্ত। কেউ কষ্ট করে এখন আর বই পড়তে চায় না।"

উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে চিরঞ্জন শাহা বাংলা একাডেমি প্রঙ্গনে ৩৩ টি বই মাদুরের ওপর বিক্রয়ের মাধ্যমে বই বিক্রয়ের যাত্রা শুরু করেন। পরে ১৯৭৪ সালে মুক্তধারা তাদের ৮ ফিট বাই ৮ ফিটের প্রথম স্টল স্থাপন করে। সেই বছর মেলায় মোট ৫টি স্টল বই বিক্রয় করে। ধীরে ধীরে দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৮ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলা একাডেমি মেলার দায়িত্ব গ্রহণ করে। আর ১৯৮৪ সালে অমর একুশে গ্রন্থমেলা অনুষ্ঠিত হয়।

প্রথমে মেলাটি ১৫ থেকে ২১শে ফেব্রুয়ারী এক সপ্তাহের জন্য আয়োজন করা হত। পরে ১ থেকে ২১শে ফেব্রুয়ারী, মেলা ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্যতা পেলে সময় বাড়িয়ে মাসজুড়ে করা হয়।