ডিম আসবে ভারত থেকে, দাম কত পড়বে, কত দিন লাগবে
মঙ্গলবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০২:৩০ পিএম | আপডেট: মঙ্গলবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০৬:২৮ পিএম

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যেসব প্রতিষ্ঠানকে চার কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে, তারা মূলত ভারত থেকে আমদানি করবে। পাশাপাশি ইন্দোনেশিয়া ও আজারবাইজান থেকেও আমদানির চেষ্টা চলছে।
আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, দেশের বাজারে প্রতিটি ডিম তারা ১০ টাকার কমে বিক্রি করতে পারবে। আর ভারত থেকে ডিম আসতে সময় লাগতে পারে এক সপ্তাহের মতো।
এক কোটি ডিম আমদানির অনুমতি পাওয়া টাইগার ট্রেডিংয়ের মালিক সাইফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ভারত ছাড়া অন্য কোনো দেশ থেকে ডিম আমদানি করাকে তাঁরা লাভজনক মনে করছেন না।
দেশের বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় চারটি প্রতিষ্ঠানকে এক কোটি করে চার কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হয় গত রোববার।
যে চারটি কোম্পানিকে ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তারা হলো মীম এন্টারপ্রাইজ, প্রাইম এনার্জি ইমপোর্টার্স অ্যান্ড সাপ্লায়ার্স, টাইগার ট্রেডিং ও অর্ণব ট্রেডিং লিমিটেড।
আমদানির অনুমতির পাশাপাশি খুচরা দোকানে একটি ডিমের সর্বোচ্চ দর ১২ টাকা বেঁধে দেওয়া হয়।
বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ গতকাল সোমবার বলেন, ঠিক কবে ডিম আমদানি হবে, তা চার প্রতিষ্ঠানকে নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি।
তবে তাদের বলা হয়েছে, যত দ্রুত সম্ভব ডিম আমদানি করতে হবে। তিনি বলেন, যেহেতু ঋণপত্র খুলে আমদানি করতে হবে, সে ক্ষেত্রে কিছুটা সময় লাগতে পারে।
বাজারে এখন ফার্মের মুরগির এক হালি বাদামি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা দরে। ডিমের দাম বছর দুই ধরেই বাড়তি। তবে অনেক বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে এক বছর ধরে।
এমনকি হালিপ্রতি দর ৬০ টাকায়ও উঠেছিল। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবির) হিসাবে, ২০২১ সালের জানুয়ারিতে বাজারে এক হালি ডিমের দাম ২৮ থেকে ৩০ টাকা ছিল।
ভারত থেকে আমদানি করে দেশে বিক্রি করতে ডিমের দাম কত পড়তে পারে জানতে চাইলে টাইগার ট্রেডিংয়ের মালিক সাইফুর রহমান বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, হরিয়ানা, হায়দরাবাদে ও অন্ধ্রপ্রদেশে ডিমের হালিপ্রতি দর ১৮ রুপি থেকে ২২ রুপি (২৪ থেকে ২৯ টাকা)। এর সঙ্গে পরিবহন ও অন্যান্য খরচ যোগ হবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি ৩৬ থেকে ৪০ টাকা হালির মধ্যে ক্রেতাদের হাতে ডিম তুলে দিতে পারব।’
সাইফুর রহমান আরও বলেন, ঋণপত্র খোলা দ্রুত সম্ভব হলে এবং অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষ করা গেলে এক সপ্তাহে ভারত থেকে ডিম আমদানি সম্ভব।
বাংলাদেশে ডিম আমদানি নিষিদ্ধ। তবে প্রয়োজন হলে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মতিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আমদানির অনুমতি দিতে পারে।
কাস্টমস ট্যারিফের তালিকা (২০২৩-২৪) অনুযায়ী, ডিমের ওপর ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক, ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর এবং ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক রয়েছে।
মোট শুল্ক–করভার ৩৩ শতাংশ। ফলে ১০০ টাকার ডিম আমদানি করতে ৩৩ টাকা শুল্ক–কর দিতে হবে।
ডিম আমদানির অনুমতি পাওয়া প্রাইম এনার্জি ইমপোর্টার্স অ্যান্ড সাপ্লায়ার্সের মালিক এবং বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) পরিচালক মো : নিজাম উদ্দিন বলেন, ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ায় পুরো দেশ পুষ্টির সংকটে পড়েছে। এখন আমদানিতে করছাড় দেওয়া উচিত।
নিজাম উদ্দিন বলেন, তাঁর প্রতিষ্ঠান ভারতের পাশাপাশি ইন্দোনেশিয়া ও আজারবাইজান থেকে ডিম আমদানির চেষ্টা করছে। আজারবাইজানে দাম ভারতের চেয়ে কিছুটা কম। ইন্দোনেশিয়ায় ভারতের কাছাকাছি।
তবে সমস্যা হলো আজারবাইজানের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক প্রক্রিয়া সহজ নয়।
ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করলে ১৫ দিন ও আজারবাইজান থেকে এক মাসে ডিম আমদানি করা যাবে উল্লেখ করে নিজাম উদ্দিন বলেন, বিষয়টি নির্ভর করছে আমদানি ও রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দপ্তর থেকে কতটা দ্রুত প্রক্রিয়াগত কাজ শেষ হয়।
দেশের বাজারের ডিম–সংকট ও বাড়তি দামের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর নভেম্বরে ৬টি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ৫১ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি চেয়ে সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানিয়েছিল। তখন অনুমতি দেওয়া হয়নি।
এদিকে আমদানির অনুমতির খবরে দেশের বাজারে ডিমের দাম কমতে শুরু করেছে। পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি ১০০টি ডিমের দাম ১৫ থেকে ২০ টাকা কমেছে।
টিসিবির হিসাবে, গত রোববার প্রতি হালি ডিম ৫০ থেকে ৫২ টাকায় বিক্রি হয়। গতকাল সোমবার বিক্রি হয়েছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা দরে।
আরও পড়ুন
- দেশে স্বর্ণের দামে নতুন রেকর্ড
- আয়কর রিটার্ন জমার সময় বাড়ল ২ মাস
- রিজার্ভ কমে ১৬ বিলিয়ন ডলারের নিচে
- দেশে প্রথমবারের মতো ২৫০ সিসির মোটরসাইকেল
- পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১২,৫০০ টাকা চূড়ান্ত
- ডলারের দর কমানো হলেও প্রভাব নেই বাজারে
- সরকার নির্ধারিত দামকে পাত্তা দিচ্ছেন না আড়তদাররা
- ডলার সংকটে ভুগছে ২১ ব্যাংকে