1. »
  2. আন্তর্জাতিক

গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতায় মৃতের সংখ্যা ছাড়াল ৫০ হাজার ৯০০

শনিবার, ১২ এপ্রিল, ২০২৫ ১১:৩২ এএম | আপডেট: শনিবার, ১২ এপ্রিল, ২০২৫ ১১:৩২ এএম

গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতায় মৃতের সংখ্যা ছাড়াল ৫০ হাজার ৯০০

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের লাগাতার বিমান ও স্থল অভিযানে নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ভয়াবহ রকমের বেড়ে গেছে। আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলমান আক্রমণে নিহতের সংখ্যা ইতিমধ্যেই ৫০ হাজার ৯০০ ছাড়িয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে থাকা বহু মানুষের সন্ধান না মেলায় প্রকৃত নিহতের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। জাতিসংঘ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ক্রমাগত এ সংকটের প্রতি আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ইসরায়েলের সীমান্ত অতিক্রম করে আকস্মিক হামলা চালালে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে অঞ্চলটি। এরপরই শুরু হয় ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক অভিযান। গাজার উপর স্থল ও আকাশপথে সামরিক হামলা ক্রমেই বেড়ে যায়। ২০২৪ সালের মার্চে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের মাধ্যমে ইসরায়েল আবারও ব্যাপক আক্রমণ শুরু করে। মূলত ‘সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান’ নামে চালানো এই হামলা বাস্তবে একটি জাতিগত নিধনযজ্ঞে রূপ নিয়েছে, যার প্রধান শিকার হচ্ছেন নারী ও শিশুরা।

হামাস-শাসিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৮ মার্চ থেকে ৯ এপ্রিলের মধ্যে চালানো অন্তত ৩৬টি ইসরায়েলি হামলায় কেবল নারী ও শিশুরাই প্রাণ হারিয়েছেন। শুক্রবার সকালেই একাধিক আক্রমণে অন্তত ২০ জন নিহত হন। একইসঙ্গে সরকারি তথ্যমতে, ১৮ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত ১,৫৪২ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে অনেকেই বেসামরিক নাগরিক। গাজায় ইসরায়েলের লাগাতার বোমাবর্ষণে এখন পর্যন্ত ৫০,৯১২ জন নিহত এবং আরও ১,১৫,৯৮১ জন আহত হয়েছেন। তবে গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস বলছে, নিহতের প্রকৃত সংখ্যা ৬১ হাজার ৭০০ ছাড়িয়ে গেছে, যাদের অনেকেই ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে ছিলেন।

এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম ঘেব্রেয়েসুস গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, গাজায় ত্রাণ প্রবেশে বাধা দেওয়ায় সেখানে নতুন করে রোগ ও মৃত্যুর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তাঁর মতে, ১০ হাজারেরও বেশি মানুষকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য স্থানান্তর করা প্রয়োজন। অপরদিকে, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান বলেন, “এটা যদি বর্বরতা না হয়, তাহলে বলুন—এটা কী?” তিনি বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান যেন তারা এই অমানবিকতার বিরুদ্ধে কার্যকর অবস্থান গ্রহণ করেন।

গাজায় চলমান এই হত্যাযজ্ঞ ও মানবিক বিপর্যয় আমাদের কেবল শোকাহত করে না, বরং বিশ্ব মানবতার মৌলিক প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করায়। নিরীহ ফিলিস্তিনিদের রক্ষা করতে এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে এখন প্রয়োজন আন্তর্জাতিক সংহতি, কার্যকর কূটনীতি ও জনমত গড়ে তোলা। এই যুদ্ধ নয়, শান্তি—এই মৃত্যু নয়, মানবিকতার জয়—এটাই হোক ভবিষ্যতের লক্ষ্য। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা