চাঁদাবাজি বন্ধ ও নিত্য পন্যের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের উদ্যোগ কম : রিজভী
রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ০২:৪৩ পিএম | আপডেট: রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ০২:৪৩ পিএম
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমাতে পারছে না। অন্তবর্তিকালীন সরকার বিপ্লবের মধ্যে গঠিত হয়েছে। এই সরকারকে মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে হবে। সেই প্রত্যাশা পূরণে ঘাটতি থাকলে, রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের চিন্তা অনুযায়ী কথা বলবে।
আজ রোববার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সূচনা কমিউনিটি সেন্টারের সামনে জাতীয়তাবাদী কৃষকদল মহানগর উত্তরের শীতবস্ত্র বিতরণ কর্মসূচিতে বক্তব্য তিনি এ কথা বলেন।
নিত্য পন্যের দাম নিয়ন্ত্রণে চাঁদাবাজি বন্ধের বিষয়ে তিনি বলেন, রাস্তার মোড়ে মোড়ে চাঁদাবাজদের ধরুন। অনেক সময় পুলিশ খাদ্যপণ্যের গাড়ি থামি চাঁদা আদায় করছে। এগুলো বন্ধ করলেই দাম কমে আসবে। আমরা এটা বলি না যে সরকারের কোনো লোক এটা করছে। কিন্তু শক্তিশালী প্রশাসনিক নির্দেশনা থাকলে রাস্তায় রাস্তায় চাঁদাবাজি হতো না। মানুষকে এই পরিস্থিতি যদি আগের আমলের চেয়ে স্বস্তি দিতে না পারে তাহলে মানুষ হতাশ হবে। খাদ্যপণ্য ও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমেনি। জাতীয়তাবাদী কৃষকদল শাক সবজি নিজেরা কিনে ভর্তুকি দিয়ে বিক্রি করছে। এটাই হচ্ছে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের বৈশিষ্ট্য। দূর্গম চরে কৃষককে শস্য উৎপাদনেও সহযোগিতা।
তিনি আরও বলেন, যখন গণতন্ত্র ছিলো না তখন আমাদের আন্দোলন করতে হয়েছে। শেখ হাসিনার লাল চক্ষু উপেক্ষা করে বিশেষ করে তার প্রশাসনের সামনে বুকে সাহস নিয়ে হাসিনার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হয়েছে। তাদের অনেকে গ্রেফতার হয়েছে, অনেকে মৃত্যু বরন করেছে। দেশের স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে কৃষক দল কৃষি উন্নয়নে কাজ করবে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা ছেলেরা যদি কৃষকের জন্য কাজ করে সেই কৃষির উন্নয়ন দ্রুত হবে। মানুষ যেনো অনাহারে না থাকে অন্তবর্তিকালীন সরকারকে এ দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। এটাই তাদের কাজ।
অন্তবর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে রিজভী বলেন, মানুষ নির্বিঘ্নে চলাচল করবে। কেউ হুমকিতে থাকবে না। কিন্তু আপনারা যদি প্রশাসনে শেখ হাসিনার দোসরদের যদি লালনপালন করেন। আপনি নারায়নগঞ্জে এসপি যিনি যুবদলের শাওন হত্যায় জড়িত। সেই এসপিকে যদি ডিসি হেডকোয়ার্টার বানান। তাহলে আপনি সমাজ থেকে কিভাবে চাঁদাবাজি বন্ধ করবেন। কিভাবে খুনাখুনি বন্ধ করবেন। কিভাবে হানাহানি বন্ধ করবেন। আপনাকে সূফী হওয়ার দরকার নেই। সাধক হওয়ার দরকার নেই। আপনি দেখুন কে অন্যায় করছে তাকে গ্রেফতার করুন। আইনের আওতায় আনুন।
যে পুলিশ আহত হয়েছিলো তাকে ভালো পোস্টিং দিলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন না। যুবদল নেতা, যিনি সিএনজি চালাতো। সেই যুবদল নেতা হত্যাকারীকে ভালো পোস্টিং দিলে আপনি কিসের প্রশাসন চালাবেন। প্রশাসনের ভেতরে যে কালো দোসর ও ভূতগুলো আছে। তারা আপনাদেরকে এবং পরবর্তী পর্যায়ে যে সরকার আসবে তাদেরকে নানাভাবে বিনষ্ট করার চেষ্টা করবে। আপনাদের প্রাথমিক দায়িত্ব ছিল তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা। তা না করে যদি আপনারা ভালো পোস্টিং দেন। পদোন্নতি দেন তাহলে কিন্তু মানুষ ভালো চোখে দেখবে না।
রাজনৈতিক সংস্কারের বিষয়ে সম্প্রতি এক উপদেষ্টার বক্তব্যের জবাবে রিজভী বলেন, এটা একধরনের অহংবোধে অভিব্যক্তি। একাত্তর কার সৃষ্টি, যুদ্ধ সৃষ্টি, যুদ্ধে বিজয় কাদের, এরশাদ কে নামিয়ে যে গণতন্ত্রের আরেকবার বিজয় করেছিলাম এটা কি সুশীল সমাজের অবদান, তখন সুশীল সমাজ সমার্থন দিয়েছে।
মাননীয় উপদেষ্টার উদ্দেশ্যে আমি বলব, আপনার কথাবার্তা মইনুদ্দিন ফক উদ্দিনের পুনরাজ্জীবন দেখছি। এটা হতে পারে না। বরং মইনুদ্দিন ও ফতুদিনের সেই তথাকথিত সংস্কারের ফলে হাসিনার মতো কর্তৃত্ববাদী, ফ্যাসিস্ট, যিনি গণতন্ত্রের সকল প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়ে একটা সম্রাজ্ঞী শাসন করেছিল। তার বিরুদ্ধে কথা বললে হয় জেল, না হলে রাস্তাঘাটে নদী নালায় লাশ পড়ে থাকত। এইটাই দেখেছি আমরা সেই সংস্থার ফল।
আপনারা যদি প্রকৃতি সংস্কার করেন। তাহলে নির্বাচন, গণতন্ত্রের অপরিহার্য অংশগুলো, আইনের শাসন ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা করা এত বিলম্ব হওয়ার কথা না। এতদিনের আপনাদের ক্ষমতায় শাসন বিচার বিভাগকে শক্তিশালী করতে পারতেন। অগ্রগতি একেবারে হয় নি তা না। আপনারা দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকে রাজনৈতিক দলগুলো ৫০ বছরেও কোন সংস্থার করেনি এমন অহংকার দেখান কিন্তু মানুষ আপনাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেব। মনে করবে আপনারা অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছেন।
শেখ হাসিনা গত ১৫ বছরের গণতন্ত্র গণতন্ত্র নিরুদ্দেশ করে দিয়েছিল। আপনারা সেই সেই ভোটের অধিকার টি আপনারা হয়তো ফিরিয়ে দিতে চান না এই ধরনের ধারণা মানুষ করবে। মানুষের মধ্যে এমন আশঙ্কা তৈরি হবে। আপনারা যেটা করবেন অতি তাড়াতাড়ি ভোট দিতে পারে, নির্বাচন হতে পারে সেই আশাবাদ মানুষের কাছে আপনারা তুলে ধরুন। সেই চেষ্টা সেই সংস্কার। অতি দ্রুত সেই কাজটি করুন।
অন্তবর্তিকালীন সরকার বিপ্লবের মধ্যে গঠিত হয়েছে। এই সরকারকে মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে হবে। সেই প্রত্যাশা পূরণে ঘাটতি থাকলে, রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের চিন্তা অনুযায়ী কথা বলবে। নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য পণ্যের দাম কোনো ভাবেই কমাতে পারছে না সরকার।
আমরা বলেছি, আপনারা মার্কেটে পাইকারি মূল্যে পণ্য বিক্রি করুন। সিণ্ডিকেট বাজদের ধরুন। যারা আগে থেকে সিন্ডিকেটের সঙ্গে দুষ্টু চক্র হাত মিলিয়ে এই কাজ করে যাচ্ছে তাদের ব্যাপকভাবে আইনের আওতায় নিয়ে আসুন। তাহলে স্বয়ংক্রিয় ভাবে দেখবেন দাম কমে আসবে। মাঠে কৃষকের উৎপাদিত পণ্য দ্রুত বাজারে আনার ব্যবস্থা করুন। এরমধ্যে যাতে মধ্যস্বত্বভোগীরা যাতে হাত দিতে না পারে, তাদের কালো হাত যেনো প্রসারিত হতে না পারে। এদেরকে চিহ্নিত করুন। তাদের আইনের আওতায় আনুন। এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা ও চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। একটি রাজনৈতিক দল চাঁদাবাজি বন্ধ করতে পারে না। তারা নিজের দল নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। চাঁদাবাজি বন্ধে সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে।
শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষক দলের সভাপতি কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন, সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুলক, দপ্তর সম্পাদক মো. শফিকুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক শামসুর রহমান শামসহ মহানগর উত্তরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
আরও পড়ুন
- শেখ হাসিনা তার বাবাকে দ্বিতীয়বার হত্যা করেছে : গয়েশ্বর
- বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক
- রাজধানীর মোহাম্মদপুরে শহীদ ও আহত পরিবারের পাশে তারেক রহমান
- ওবায়দুল কাদের কীভাবে দেশ ছাড়ল, জবাব চান জয়নুল আবদীন ফারুক
- লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ
- প্রয়োজনীয় সংস্কার করে আগামী বছরের মধ্যেই নির্বাচন করা সম্ভব : গণতন্ত্র মঞ্চ
- নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং হবে, নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে প্রস্তুুতি নিতে হবে : দুদু
- দীর্ঘ দেড় যুগ ধরে মানুষ ভোট দেয়ার প্রতিক্ষায় আছে : কাইয়ুম চৌধুরী