ভারতের সঙ্গে আর নতজানু পররাষ্ট্রনীতি নয়, বললেন সাবেক সেনা সদস্যরা
শনিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ ০৮:৪৯ পিএম | আপডেট: শনিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ ০৮:৪৯ পিএম
ভারতে বাংলাদেশ হাইকমিশনে হামলা এবং জাতীয় পতাকা অবমাননা স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি ‘হুমকি’ মনে করে দেশটির ক্ষেত্রে আর ‘নতজানু’ পররাষ্ট্রনীতি নয়, বরং ‘সাম্যতার ভিত্তিতে’ সেটি ঠিক করতে সরকারকে আহবান জানিয়েছেন সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক সদস্যরা।
গতকাল শনিবার দুপুরে রাজধানীর রাওয়া কমপ্লেক্সের নিচে ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্যের আহবান জানিয়ে সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্যবৃন্দের আয়োজনে প্রতিবাদ সমাবেশে এমন আহবান জানানো হয়।
সরকারকে আহবান জানিয়ে অনুষ্ঠানের আহবায়ক মুক্তিযোদ্ধা ও অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল মোহাম্মদ আহসানুল্লাহ বলেন, আর কোনো নতজানু পররাষ্ট্রনীতি নয়, সাম্যতার ভিত্তিতে পররাষ্ট্রনীতি চাই। কোনো ধরনের নতজানু নীতিকে কোনো অবস্থাতেই আমরা আশ্রয়-প্রশ্রয় দেব না।
একইসঙ্গে ভারতের জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের সাথে আমাদের কোনো শত্রুতা নেই। আপনারা আমাদের বন্ধু, কিন্তু ভারতের গেরুয়া পোশাকধারী হিন্দু আধিপত্যবাদকে আমরা কোনোভাবেই এ দেশে প্রশ্রয়-আশ্রয় দিতে রাজি নই। সনাতনী হিন্দু মহাজোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশকে গ্রেফতার ও কারাগারে পাঠানোর প্রতিবাদে ভারতে, বিশেষ করে বাংলাদেশ লাগোয়া রাজ্যগুলোতে ব্যাপক বিক্ষোভ হচ্ছে।
গত সোমবার এমন একটি বিক্ষোভ থেকে ত্রিপুরার আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাই কমিশনে হামলা চালানো হয়। পরে তারা সেখানে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নামিয়ে ফেলে বলে ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে। পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পরে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়। ঘটনাটিকে ‘দুঃখজনক’ বলে বর্ণনা করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে এ ঘটনাকে ‘পূর্বপরিকল্পিত’ মন্তব্য করে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সব কূটনৈতিক মিশন ও সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভারত সরকারকে আহবান জানায় ঢাকা। মঙ্গলবার ঢাকায় ভারতের হাই কমিশনার প্রণয় ভার্মাকে ডেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবাদপত্র তুলে দেয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এ নিয়ে চলমান উত্তেজনার মধ্যে ‘ভারতীয় আগ্রাসনের’ বিরুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক সদস্যদের আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল মোহাম্মদ আহসানুল্লাহ বলেন, হজরত শাহজালাল, হজরত শাহ মখদুম, অতীশ দীপঙ্কর, শ্রী চৈতন্য, অনুক‚ল ঠাকুর, লোকনাথ ব্রহ্মচারী প্রমুখের আবাসভূমি এই বাংলাদেশ। আমরা যুগ যুগ ধরে এই শ্যামলভূমিতে সম্প্রীতির সাথে বসবাস করে আসছি। কিন্তু অতি উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি, সম্প্রীতি বাংলাদেশের লেডি ফেরাউন পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে ভারতের হিন্দু নেতৃত্বের শ্যেন দৃষ্টি পড়েছে আমাদের দিকে। তাদের ইদানীংকালের কর্মকান্ড এটা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করে।
তিনি বলেন, তাদের সর্বশেষ উদ্যোগ ছিল আগরতলা এবং কলকাতার বাংলাদেশি দূতাবাসে আক্রমণ চালানো এবং আমাদের বাংলাদেশের পতাকাকে অবমাননা করা। আমরা এই সমস্ত ঘটনাগুলোকে আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি হিসেবে মনে করছি। এ ছাড়া ভারতের কিছু মিডিয়া ও রাজনৈতিক নেতা বাংলাদেশকে নিয়ে সার্বক্ষণিক বিষোদগার করে চলেছে। ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী যে কোনো দূতাবাসে হামলা মানে সেই দেশের সার্বভৌম এলাকার ওপরে হামলা। দেশের এই সংকটময় পরিস্থিতিতে যখন আমাদের সার্বভৌমত্বের উপরে হামলায় হয়, আমাদের পতাকা পদদলিত হয়, তখন আমরা সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা চুপ করে থাকতে পারি না।
কর্মজীবনের শুরুতে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় শপথ থেকে এখনও ‘বিচ্যুত’ হননি জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে জাতিকে ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আমরা ঐক্যবদ্ধ করতে চাই। আসুন সব ধরনের রাজনৈতিক বিভাজন ভুলে গিয়ে, ধর্ম-মত ও দলের ঊর্ধ্বে উঠে আমরা আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করি।
এ ক্ষেত্রে আমাদের দেশের তরুণ ছাত্র এবং শ্রমিক জনতাকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আপনাদের আরও আশ্বস্ত করতে চাই সশস্ত্র বাহিনীর লাখ লাখ প্রশিক্ষিত সৈনিক, হাজার হাজার প্রশিক্ষিত অফিসার সবসময় এ দেশের জনগণের পাশে ছিলাম, আমরা থাকবো। আমরা যে কোনো প্রয়োজনে দেশের জন্য জীবন বিলিয়ে দিতে প্রস্তুত। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আভ্যন্তরীণ, আন্তর্জাতিকসহ যে কোন ধরনের ষড়যন্ত্র হবে আমরা আপনাদের সকলকে সাথে নিয়ে সেই ষড়যন্ত্রকে রুখে দিতে চাই।
৫ অগাস্ট শেখ হাসিনার পতনের দিনেও সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক সদস্যদের ভ‚মিকা তুলে ধরে অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল মনীষ দেওয়ান বলেন, আজ পুনরায় আবার এখানে জমায়েত হয়েছি ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম জারি রাখার জন্য।
ভারতের নরেন্দ্র মোদি সরকারকে ‘বার্তা দিয়ে’ তিনি বলেন, মোদিজি, অমিতজি এবং রাজনাথজি, আপনারা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর যেটা দেখেছেন, ৭২ সালের সেই সেনাবাহিনী এখন আর নাই। আমরা এখন যে কোনো শত্রু মোকাবেলায় প্রস্তুত। আপনারা আর আস্ফালন তুলবেন না, ভয় দেখাবেন না। আমরা শুধু সশস্ত্র বাহিনী নই, ১৭ কোটি জনতা আছে আমাদের সাথে আপনাদের সীমান্তেই রুখে দিতে।
সমাবেশ সঞ্চালনার সময় সরকারের উদ্দেশে অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল লুৎফুল হক বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের সকল জাতীয় চুক্তিগুলো তুলে ধরুন। যেসব ভারতীয় বাংলাদেশে আছে, সেগুলো পুনর্বিবেচনা করে প্রয়োজন না থাকলে তাদের ফেরত পাঠানো হোক। যেসব ভারতীয় মিডিয়া সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছে দেশে সেগুলো বাতিল করা হোক। সমাবেশ শেষে বিভিন্ন বাহিনীর সাবেক সদস্যসহ পাঁচ শতাধিক মানুষের অংশগ্রহণে একটি মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলটি রাওয়া ক্লাব থেকে শুরু হয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় সংলগ্ন ক্রসিং হয়ে ঘুরে আবার রাওয়া ক্লাবে এসে শেষ হয়।
আরও পড়ুন
- কুড়িগ্রামে ৭০ কেজি গাঁজাসহ গ্রেপ্তার ৬
- বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষে ঢাকা, বায়ুর মান ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’
- ঘন কুয়াশার চাদরে দিনাজপুর, হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছে গাড়ি
- গাবতলীতে সেচ মেশিনের বিরোধে ছুরিকাঘাতে নিহত ১
- ঝিনাইদহে অজ্ঞাত ব্যক্তির মরাদেহ উদ্ধার
- পঞ্চগড় সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত
- আজও বায়ুদূষণের শীর্ষে ঢাকা
- সীমান্তে বিজিবির উচ্চ সতর্কতা জারি