মুন্নী সাহার ব্যাংক হিসাবে অস্বাভাবিক লেনদেন
বুধবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ ০৭:২৮ পিএম | আপডেট: বুধবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ ০৭:২৮ পিএম
সাংবাদিক এবং টেলিভিশন সঞ্চালক মুন্নী সাহার ব্যাংক হিসাবে জমা হয়েছে ১৩৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে তিনি বিভিন্ন সময় ১২০ কোটি টাকা উত্তোলন করেছেন। স্থগিত করা তার ব্যাংক হিসাবে স্থিতি আছে মাত্র ১৪ কোটি টাকা।
সাংবাদিক মুন্নী সাহা, তার স্বামী কবির হোসেন তাপস এবং তাদের মালিকানাধীন এমএস প্রমোশনের ব্যাংক হিসাবে এসব অর্থ পেয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। এর বাইরে গুলশান-তেজগাঁও লিংক রোড এলাকায় শান্তি নিকেতনে ১৬৫, রোজা গ্রীনে তাদের একটি ডুপ্লেক্স বাড়ির সন্ধান পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ওয়ান ব্যাংকের কারওয়ানবাজার শাখায় মুন্নী সাহার স্বামী কবির হোসেনের মালিকানাধীন এমএস প্রমোশনের নামে ২০১৭ সালের ২ মে একটি হিসাব খোলা হয়। হিসাবটির নমিনি হিসেবে রয়েছেন মুন্নী সাহা। ব্যাংকটির চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ শাখায় জনৈক মাহফুজুল হকের মালিকানায় প্রাইম ট্রেডার্সের নামে ২০০৪ সালের ২১ জুলাই একটি হিসাব আগেই খোলা হয়। এ দুই প্রতিষ্ঠানের নামে ওয়ান ব্যাংক থেকে ৫১ কোটি ৫০ লাখ টাকার ঋণ নেয়া হয়। ঋণ পরিশোধ না করে বারবার সুদ মওকুফ ও নবায়ন করা হয়। এর মধ্যে ২০১৭ সালেই সুদ মওকুফ করা হয় ২৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকার।
প্রতিষ্ঠান দুটির মধ্যে পারষ্পারিক ব্যবসায়িক কোনো সম্পর্ক না থাকলেও বিভিন্ন তারিখে হিসাব দুটির মধ্যে বিপুল অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে। ২০১৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর আলাদা তিনটি চেকের মাধ্যমে এমএস প্রমোশনের হিসাব থেকে প্রাইম ট্রেডার্সের হিসাবে ৫৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা স্থানান্তর করা হয়, যা সন্দেহজনক। এই অর্থ পাচার হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখছে আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বিএফআইইউ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুসন্ধানে উঠে আসে, ওয়ান ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখায় প্রাইম ট্রেডার্সের নামে চলতি হিসাব খোলা হয় ২০০৪ সালের ২১ জুলাই। প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন পণ্য আমদানি করে স্থানীয় বাজারে সরবরাহ করে। গ্রাহকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৮ সালের ৩ আগস্ট স্থানীয় বাজার থেকে সাড়ে ১১ হাজার টন মটর কেনার জন্য ৯০ দিন মেয়াদি ২৬ কোটি ৫০ লাখ টাকার ঋণ মঞ্জুর করে ওয়ান ব্যাংক। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে ঋণ পরিশোধ না হওয়ায় দুইবার মেয়াদ বাড়ায় ব্যাংক। তবুও ঋণ পরিশোধ না করায় ২০১১ সালের জানুয়ারিতে সুদ মওকুফসহ পুনর্গঠন করা হয়।
২০১২ সালের জুনে দ্বিতীয়বার এবং ২০১৭ সালের ফেব্রæয়ারিতে তৃতীয়বার ঋণ পুনর্গঠন করে ব্যাংক। তৃতীয় দফা পুনর্গঠনের সময় ব্যাংকটি সুদ মওকুফ করে ২৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। এতে তিন মাসের গ্রেস পিরিয়ডসহ ১২ বছরে মেয়াদ এবং ভবিষ্যৎ সুদ আদায় বন্ধ রাখা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের আপত্তির ফলে ঋণটি ছয় ধাপে ৬ বছরে ১৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকা পরিশোধের সময় দেয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। গ্রাহক ২০১৯ সাল পর্যন্ত কিস্তি দিলেও ২০২০ সালের পর আর পরিশোধ করেননি। পরে ২০২১ সালে ৮ কোটি ৬১ লাখ টাকার ঋণ ৩৯টি সমান কিস্তিতে ২০২৬ সালের আগস্ট পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়।
ওয়ান ব্যাংকের কারওয়ানবাজার শাখায় মুন্নী সাহার স্বামী কবির হোসেন ২০১৭ সালের ২ মে এমএস প্রমোশন নামের একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থার চলতি হিসাব খোলেন। কবির হোসেনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ৬ জুন ১৮ কোটি টাকার ওভার ড্রাফট (ওডি) ঋণ দেওয়া হয়। ঋণের দায় শোধ না হওয়ায় গ্রাহকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকের নির্বাহী কমিটির ২০১৯ সালের ২৭ জানুয়ারির সভায় ঋণটি নবায়ন করা হয়। পরবর্তী সময় একই বছরের ২৪ নভেম্বরের নির্বাহী কমিটির সভায় অপরিশোধিত ঋণ হিসাবটি নবায়নসহ ওডি ঋণ সীমা বাড়িয়ে ২৫ কোটি টাকা করা হয়। আর ২০২২ সালে ঋণ হিসাবটি ৫ বছর মেয়াদি ঋণে পুনঃতফশিল করা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন
- পাসপোর্ট সেবায় সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি, বেশি ঘুষ দিতে হয় বিচারিক সেবায় : টিআইবি
- চট্টগ্রামে চিন্ময় অনুসারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ, আইনজীবীকে হত্যা
- মিরপুর পল্লবীর মুখোশধারী ইউসুফ
- দৌলতপুরে ইউপি চেয়ারম্যান হত্যা মামলার প্রধান আসামী টুকু গ্রেপ্তার
- মোহাম্মদপুরে ডাকাতি : জড়িতদের ৫ জন বিভিন্ন বাহিনীর চাকরিচ্যুত সদস্য
- জাহাঙ্গীরনগরে ‘গণপিটুনিতে’ সাবেক ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু
- ক্ষমতার অপব্যবহারে আ.লীগের মন্ত্রী, এমপি, আয়া-বুয়ারা বাগিয়েছেন ১২৭ প্লট
- একাত্তর টিভির শাকিল ও ফারজানা রুপা আটক