1. »
  2. জাতীয়

দেশবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান তারেক রহমানের

মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ ০৮:১৩ পিএম | আপডেট: মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ ০৮:১৩ পিএম

দেশবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান তারেক রহমানের

ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশ বিরোধী উসকানিমূলক অপপ্রচারের ফলে সৃষ্ট আঞ্চলিক উত্তেজনায় দেশবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। 

গতকাল সোমবার তার সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে (এক্স ও ফেসবুক) দেয়া এক বিবৃতিতে তিনি এই আহ্বান জানান। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর বাংলাদেশকে ঘিরে ভারতীয় গণমাধ্যমে ‘উসকানিমূলক ও রাজনৈতিক বক্তব্যে’ আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি এই বিবৃতি দেন। 

বিবৃতিতে তারেক রহমান এই ধরনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি অভিযোগ করেন, ভারতীয় ভাষ্যকাররা ‘অপতথ্যের ধূম্রজাল সৃষ্টি করে’ বাংলাদেশ বিরোধী মনোভাবকে উসকে দিচ্ছে এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

আগরতলায় বাংলাদেশি কনস্যুলেটে সাম্প্রতিক হামলাকে বিভ্রান্তির ফলে সৃষ্ট অস্থিতিশীলতার প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দাবি করেন, এ ধরনের ঘটনা প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বিরোধ আরো গভীর করার ঝুঁকি তৈরি করছে বলে সতর্ক করেন। 

তারেক রহমান লিখেছেন, আন্তর্জাতিক অংশীজনদের অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে প্রায় দুই শ’ মিলিয়ন জনসংখ্যার বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করে অন্য কোনো দেশের কোনো লাভ নেই। তিনি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে রাজনৈতিক দল এবং নেতৃবৃন্দ থেকে মুক্ত হয়ে দু দেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তারেক রহমান শেখ হাসিনার প্রস্থান পরবর্তী পরিস্থিতি বোঝার জন্য এবং ভারতে তার ফ্লাইটের পর থেকে বাংলাদেশে রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতি বোঝার জন্য আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়া সত্তে¡ও ধর্মীয় সম্প্রীতি ও আঞ্চলিক সার্বভৌমত্বের নীতিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি লিখেছেন, বাংলাদেশ মূলত ধর্মীয় সম্প্রীতি ও আঞ্চলিক সার্বভৌমত্বের দেশ ছিল এবং থাকবে। এদেশে জাতি, বর্ণ ও ধর্ম নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিকের অধিকার ও স্বাধীনতা সুরক্ষিত রয়েছে। ভারপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারম্যান উসকানির ফাঁদে বাংলাদেশিদের পা না দেয়ার আহ্বান জানিয়ে সংযমের আহ্বান জানান। 

তিনি লিখেছেন, আমি আমার সহকর্মী বাংলাদেশিদের সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের জন্য ও কোনো ধরনের উসকানির ফাঁদে পা না দেয়ার জন্য অনুরোধ করছি। জাতি যখন হাসিনা-পরবর্তী রাজনৈতিক দৃশ্যপট ও ক্রমবর্ধমান আঞ্চলিক সমস্যা মোকাবিলা করছে, ঠিক সেই সময়ে বিবৃতিটি দেয়া হয়েছে।

তারেক রহমান বিরোধীদের পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করে তোলার এই অপচেষ্টাকে মোকাবিলা করে সবার প্রতি শান্তি বজায় রাখার এবং ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও অভিন্ন স্বার্থের ভিত্তিতে ভারতের সাথে শক্তিশালী দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক গড়ে তুলতে বলেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেছেন, তারেক রহমানের মন্তব্য বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের জটিলতাগুলোকে তুলে ধরে, যা প্রায়ই বৃহত্তর কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পরিবর্তে পৃথক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। তার সংযমের বার্তা অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিধ্বনিত হয় কি না, এখন সেটাই দেখার বিষয়।

এদিকে মঙ্গলবার বিকালে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আয়োজিত রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্ত কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ৬০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাড়ে চারশ’ শিক্ষার্থী বিএনপির গুলশান কার্যালয়ে এই কর্মশালায় অংশ নেন। ৩১ দফা ও বিএনপি রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে কি কি উদ্যোগ নেবে তা কর্মশালায় উঠে আসে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানসহ উপস্থিত প্রশিক্ষকগণ শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। 

পরে তারেক রহমান বলেন, আগামীতে বিএনপি রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে শিক্ষাখাতে বাজেট বাড়ানোর ওপর জোর দেবে। বিশেষ করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওপর জোর দেয়া হবে। যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে। যাতে শিক্ষার মান বাড়ে এবং শিক্ষার্থীরা সামাজিক মূলবোধ সম্পর্কে প্রাথমিক পর্যায় থেকে ধারণা লাভ করে। 

তিনি বলেন, যেভাবেই হোক দুনীর্তি রোধ করতে হবে। দুর্নীতির কালো থাবা থেকে দেশ ও জনগণকে বের করে নিয়ে আসতে হবে। অনেক সময় বিদেশে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে ভাষার সমস্যা দেখা দেয়। পাঠ্য বইয়ে বাংলা-ইংরেজির পাশাপাশি তৃতীয় আরেকটি ভাষা অবশ্যই শিখানো হবে। এতে দেশের বাইরে কর্মসংস্থানে সমস্যা হবে না।  শিক্ষার্থীদের জন্য খোলাধুলা বাধ্যতামূলক করতে হবে। তাদের হাতের লেখা ও আর্টের প্রতি জোর দেয়া হবে। 

নারীদের স্বাবলম্বী করার উদ্যোগ নেয়া হবে জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আগামীতে জনগণের রায়ে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ফ্যামিলি কার্ড চালু করা হবে। এই কার্ড সবাই পাবে। প্রতিটি পরিবারের মা কিংবা স্ত্রীর নামে এই কার্ড দেয়া হবে। তাদের মধ্যে দেশীয় উৎপাদনশীল পণ্য বিতরণ করা হবে। মানুষের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করতে পারলে রাষ্ট্রের সংস্কার কার্যক্রম কাজে আসবে। এছাড়াও ফ্যামিলি কার্ডের মতো কৃষকদেরকে ফার্মার্স কার্ড দেয়া হবে। এতে প্রকৃত কৃষকদের শনাক্ত করে, তাদেরকে ডাটাবেজের আওতায় আনা হবে। রাষ্ট্র থেকে যত বেশি সম্ভব সহযোগিতা করার চেষ্টা করা হবে। নিরাপদ স্বাস্থ্য প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, স্বাস্থ্য বিষয়ে জনগণকে সচেতন করতে হবে। প্রতিটি গ্রামে একাধিক পল্লী চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হবে। এর মধ্যে ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ নারীকে পল্লী চিকিৎসক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হবে। কর্মসংস্থান বাড়ানো হবে।  

তিনি আরও বলেন, ঢাকা শহরের রিকশাচালকদের বেসিক প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী বিদেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। বাজারের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল প্রসঙ্গে বলেন, আমাদেরকে উৎপাদন বাড়াতে হবে। চাঁদাবাজি রোধ করতে হবে। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে পরিবেশ রক্ষায় খাল ও নদী খননের উদ্যোগ নেয়া হবে। ৫ বছরে ৫ কোটি গাছ লাগানো হবে।  

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বিএনপি ২ বছর আগে ৩১ দফা দিয়েছে। আমরা তখনও জানতাম না স্বৈরাচার কবে বিদায় নেবে, তারপরেও আমরা রাষ্ট্র সংস্কারে ৩১ দফা দিয়েছি। এই দফাগুলো সারাদেশের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে। কর্মশালায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির মিডিয়া সেলের আহবায়ক অধ্যাপক ড. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, দলটির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশাররফ হোসেন, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ড. মাহাদী আমিন, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য সাত্তার পাটোয়ারী, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির।