1. »
  2. অর্থ বাণিজ্য

নানামুখী সংকটে ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তারা

সোমবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ০৯:০৪ পিএম | আপডেট: সোমবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ০৯:০৪ পিএম

নানামুখী সংকটে ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তারা

দেশে শিল্প-বাণিজ্যের সংকট কাটছে না। কঠিন সময় পার করছেন ছোট-বড় ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তারা। ব্যাংক খাতে অরাজকতা চলছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। মনগড়া অভিযোগে করা মামলা বাণিজ্যের শিকার হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এমন একটা বিরুদ্ধ পরিবেশে গতিশীলভাবে ব্যবসায়িক কর্মকান্ড অব্যাহত রাখা সম্ভব হচ্ছে না।

ব্যবসায়ীদের অভিমত, তিন-চার মাসে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে সফল হয়নি অন্তর্বর্তী সরকার। কয়েকদিন আগেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সামনে একজন ব্যবসায়ীকে পেটানো হয়েছে। চলছে মামলা-বাণিজ্য। ব্যক্তিগত শত্রুতা থাকলেই বানিয়ে দেয়া হচ্ছে হত্যা মামলার আসামি। ঋণের সুদের হার বাড়ছে। এসব নতুন সমস্যার সঙ্গে গ্যাস-সংকট, প্রায় সব ক্ষেত্রে ঘুষ-দুর্নীতি, বিচারে দীর্ঘসূত্রতার সমস্যাগুলো রয়েই গেছে।

নানামুখী সংকটে ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তারা। তারা বলেছেন, কারখানা মালিকরা এখনো নিরাপদ নন। নানা সংকটে থেকেও তারা কারখানা চালু রাখার চেষ্টা করছেন, কিন্তু কিছু পরিকল্পিত ঘটনায় ব্যবসায়ীরা উদ্বিগ্ন। এ অবস্থা চলতে থাকলে অর্থনীতির চাকা সচল রাখা সম্ভব নয়। অর্থনীতির স্বার্থে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে অন্তর্বর্তী সরকারকে কঠোর হওয়ার আহŸান জানিয়েছেন তারা। 

বিগত সরকারের আমল থেকেই দেশের শিল্প খাত নানা চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে। বস্তুত দুর্নীতি ও জ্বালানির অপর্যাপ্ততাসহ এ খাতের অন্য সমস্যাগুলো বহুল আলোচিত। শিল্প-কারখানায় প্রয়োজন অনুযায়ী জ্বালানি না মিললে উৎপাদন ব্যাহত হয়, যা বলাই বাহুল্য। শিল্পের উৎপাদন সক্ষমতা হ্রাসে বহুমাত্রিক সমস্যা সৃষ্টি হয়। কাজেই শিল্প-কারখানায় গ্যাস-বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি বাণিজ্য খাত যাতে দুর্বল হয়ে না পড়ে, সেজন্য যা যা করণীয় সবই করতে হবে।

ব্যবসায়ীরা বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করতে পারলে ব্যবসা আরও এগিয়ে যাবে। এখনো শ্রমিকরা হাজিরা দিয়ে রাস্তায় নেমে আসছেন, ব্যবস্থাপকদের মারধর করছেন। স্থানীয় মাস্তানদের কারণে ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা অনেকটা অতিষ্ঠ।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আহসান খান চৌধুরী বলেন, দেশের এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি দরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা। তাহলে ব্যবসা অনেক এগিয়ে যাবে। তিন মাসের মধ্যে ব্যাংকে ঋণপত্র (এলসি) খোলার পরিস্থিতির উন্নয়ন হওয়ায় অর্থ উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানান। 

তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমরা অনেক এগিয়েছি। এলসি খুলতে পারতাম না। এখন একটু ভালো আছি। তবে আরও অনেক দূর যেতে হবে।

বিনিয়োগ না হলে কর্মসংস্থান হবে না, তাই ব্যাংক খাতকে ঢেলে সাজানো দরকার বলে মনে করেন আহসান খান চৌধুরী। তিনি বলেন, সুদ নিয়ে বিড়ম্বনায় আছি। সুদের হার বেড়ে গেলে মূল্যস্ফীতি কমবে, কিন্তু ব্যবসার ক্ষতি হবে। জানি না, আর কত দিন এ বোঝা টানতে পারব। আর কোনোভাবেই উৎপাদন বন্ধ করা যাবে না। মানুষ রাস্তায় নামবে আর মার খাবে মালিক এটা হবে না। উৎপাদন বন্ধ হলে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। তখন ব্যাংকের ঋণ শোধ করা যাবে না।

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সভাপতি সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমাদের প্রথম প্রত্যাশা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন। বর্তমান সরকার যে এ উন্নয়ন ঘটাতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে, এটা তাদের মানতে হবে। বিভিন্ন জায়গায় মাস্তানি ও চাঁদাবাজি চলছে।

এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন বলেন, ব্যবসা বাণিজ্যে যে সংকট চলছে তা দূর করতে ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা ও সুষ্ঠুভাবে ব্যবসা পরিচালনার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। তা না হলে বিনিয়োগ টেকসই হবে না। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সার্বিক অর্থনীতির একটা উন্নয়ন দরকার।

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে চেষ্টা করছি। আপনারা হতাশ হবেন না। ১৫ বছর ধরে যা হয়েছে তা অকল্পনীয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর আইএমএফে (আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল) কাজ করেছেন। আমাকে বলেছেন, সবার টাকা নিয়ে ব্যাংক থেকে চলে যাওয়া বিশ্বের কোথাও এমন দেখেননি তিনি, যা হয়েছে বাংলাদেশে।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ৩ থেকে ৪ মাসে সালেহউদ্দিন সব ঠিক করে দেবেন এমনটা আশা করা ঠিক নয়। সামষ্টিক অর্থনীতির চ্যালেঞ্জগুলো অবশ্য যথার্থ। অর্থনীতি স্থিতিশীল না হলে অন্য সূচকগুলো সফল হয় না। তবে ক্ষয় হয়ে যেতে শুরু করা অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আসতে শুরু করেছে এবং আরও ক্ষয় হওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, (অর্থনীতির) শরীরে যে ক্ষত হয়েছে, তা প্যারাসিটামল দিয়ে সারবে না। তাই কিছু কঠিন অস্ত্রোপচারে যেতে হবে।