1. »
  2. তথ্য প্রযুক্তি

বাংলাদেশকে ট্রানজিট করে সেভেন সিস্টার্সে ব্যান্ডউইথ নেয়ার প্রস্তাব বাতিল

সোমবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ০৭:৩৩ পিএম | আপডেট: সোমবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ০৭:৩৩ পিএম

বাংলাদেশকে ট্রানজিট করে সেভেন সিস্টার্সে ব্যান্ডউইথ নেয়ার প্রস্তাব বাতিল

বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্যে ব্যান্ডউইথ নেয়ার প্রস্তাবনা নাকচ করলো বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। সেইসঙ্গে ট্রানজিটের অনুমতি দেয়ার জন্য টেলিযোগাযোগ বিভাগে পাঠানো চিঠিও বাতিল করেছে। টেলিযোগাযোগ বিভাগ, বিটিআরসি এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান দুটির শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

তারা এ বিষয়ে আইটিসি গাইডলাইনেও বিদেশের গ্রাহকদের সেবা দেয়া কিংবা বাংলাদেশকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহারের কোনো বিধান নেই। পতিত শেখ হাসিনা সরকারের সময়কালে দেশের দুই ইন্টারন্যাশনাল টেলিস্ট্রেরিয়াল ক্যাবল (আইটিসি) কোম্পানি সামিট কমিউনিকেশন্স এবং ফাইবার এট হোম ভারতের টেলিকম অপারেটর ভারতী এয়ারটেলের সাথে মিলে এই উদ্যোগ নিয়েছিল। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদনও করেছিল ভারতীয় এয়ারটেল।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এটি টেলিযোগাযোগ বিভাগকে পদক্ষেপ নিতে পাঠায়, যা বিভাগ বিটিআরসিকে পাঠিয়েছিল। যা টেলিযোগাযোগ বিভাগের অনুমোদন পেলেই চূড়ান্ত হয়ে যেত। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর এ উদ্যোগ ঝুলে থাকে। এবার বিটিআরসি এ সিদ্ধান্তে সরাসরি না করে দিয়েছে। 

বিটিআরসি বলছে, এ ট্রানজিটের কারণে আঞ্চলিক হাব হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান দুর্বল হবে। এতে ভারত এখানে শক্তিশালী হাব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। সংস্থাটি বলছে, আইপিএলসি ট্রানজিট নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রাথমিক কোনো আলোচনাও হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই এর যৌক্তিকতা, আইনি ও বাণিজ্যিক বাস্তবতা, ভ‚-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে গুগল, অ্যামাজন, মেটার মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর এজড পপ ভারতের কলকাতা, মুম্বাই ও চেন্নাইয়ে হওয়ায় আইপিএলসি ট্রানজিটের মাধ্যমে ভারতের টেলিকম অপারেটরগুলো সেভেন সিস্টার্সে সহজে ও গতিময় ইন্টারনেট দিতে পারবে। এতে এসব প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশে এজড পপ ও ডেটা সেন্টার করে সেভেন সিস্টার্স, চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও মিয়ানমারে ব্যান্ডউইথ রফতানি-ইন্টারনেট সেবা দেয়ার সম্ভাবনাকে চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলবে।

ট্রানজিটের পরিকল্পনা যেমন ছিল : ত্রিপুরা, মিজোরাম, মণিপুর, অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, নাগাল্যান্ড ও মেঘালয় ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোকে বলা হয় ‘সেভেন সিস্টার্স’। ভারতের মূল ভূখন্ড থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন এই সাত রাজ্যে খুব সহজে দ্রুত গতির ইন্টারনেট পরিষেবা নিশ্চিত করতে ভারতীয় এয়ারটেলের সাথে ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিজড সার্কিট (আইপিএলসি) এই উদ্যোগ গ্রহণ করে। এতে ট্রানজিট রুট হিসেবে বাংলাদেশের ভ‚মি ব্যবহারের পরিকল্পনা ছিল। বাংলাদেশের ব্রাক্ষণবাড়িয়া, আখাউড়া এবং ভারতের আগরতলার নো-ম্যানস ল্যান্ডে আন্তঃসংযোগ পয়েন্টের মাধ্যমে এই সংযোগ হওয়ার কথা ছিল। সামিট ও ফাইবার এট হোম আখাউড়া সীমান্তে টেরিস্ট্রিয়াল ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশন (টিসিএলএস) স্থাপন করতো। এরপর কক্সবাজার ও কুয়াকাটায় বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানির সাবমেরিন ক্যাবল ল্যান্ডি স্টেশনে ফাইবারের মাধ্যমে সেই টিসিএলএসের সাথে সংযোগ করা হতো। এর মাধ্যমে এই আইপিএলসি সেবা সিঙ্গাপুর পর্যন্ত স¤প্রসারিত হতো।

পরিকল্পনা বাস্তবায়িত না হলে ‘ক্ষতি’ ভারতেরই : ভারতের সেভেন সিস্টার্স থেকে চেন্নাই সাবমেরিন ক্যাবলের ল্যান্ডিং স্টেশনের দূরত্ব ৫৫০০ কিলোমিটার। বর্তমান নেটওয়ার্কে ভারতের সিঙ্গাপুর পর্যন্ত দূরত্ব ৮৭০০ কিলোমিটার। সেভেন সিস্টার্সের পথের এলাকা দুর্গম হওয়ায় ফাইবার নেটওয়ার্ক রক্ষণাবেক্ষণ, নতুন নেটওয়ার্ক তৈরি ও নেটওয়ার্ক ঠিক রাখা বেশ দুঃসাধ্য কর্মযজ্ঞ। শুধু তাই নয়, দীর্ঘ দূরত্বের কারণে ল্যাটেন্সি হয় ৫৫ মিলিসেকেন্ড, এটি সিঙ্গাপুর পর্যন্ত গিয়ে দাঁড়ায় ৮৭ মিলিসেকেন্ড। বাড়ায় খরচও। ফলে মানসম্মত সেবা দেয়া অনেক চ্যালেঞ্জিং। অন্যদিকে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে এই ট্রানজিট নেটওয়ার্কের কারণে দূরত্ব কমে যাবে ৩ হাজার ৭০০ কিলোমিটার আর সিঙ্গাপুর পর্যন্ত ল্যাটেন্সি কমে যাবে ৩৭ মিলিসেকেন্ড। 

বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলস পিএলসির (বিএসসিপিএলসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আসলাম হোসেন বলেন, তারা যেটা করতে যাচ্ছিল, কলকাতা দিয়ে ইন্ডিয়ার ব্যান্ডউইথ নেবে, সেটা আমার দেশের ভেতর দিয়ে নিয়ে ওই ব্যান্ডউইথ সেভেন সিস্টার্সে পাঠাবে। এটা ইলিগ্যাল ট্রাফিকিং। 

আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট গেটওয়ে অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (আইআইজিএবি) সভাপতি আমিনুল হাকিম বলেন, এই ট্রানজিটে বাংলাদেশের কোনো লাভ হতো না। লাভবান হতো দুই আইটিসি অপারেটর। তারা কৌশলে এমন একটি আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ে যেতো যেখানে আইটিসি হিসেবে ভারত হতে ব্যান্ডউইথ কেনা এবং এই ট্রানজিটের চার্জ নিয়ে কোনো লেনদেন হতো না। ফলে সরকার বিপুল রাজস্ব হারাতো।