গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি : একদিনেই ২৮০০ কোটি ডলার হারালেন আদানি
বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪ ০৭:৫৭ পিএম | আপডেট: বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪ ০৭:৫৭ পিএম
যুক্তরাষ্ট্রে ঘুষ ও প্রতারণার মামলার খবরে আবারও বিশ্ব গণমাধ্যমের খবরে ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানি। দুর্নীতির অভিযোগে এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ফেডারেল আদালতে তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এমনকি জারি করা হয়েছে গ্রেফতারি পরোয়ানা। মামলা ও গ্রেফতারি পরোয়ানার খবরের প্রভাব পড়েছে আদানির ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানেও। এ খবরে বৃহস্পতিবার আদানি গ্রুপের শেয়ারে বড় ধরনের দরপতন শুরু হয়েছে। মাত্র একদিনেই ভারতীয় এ ব্যবসায়িক গোষ্ঠীটির ২৮০০ কোটি মার্কিন ডলার লোকসান হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানায় ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২৬৫ মিলিয়ন ডলার ঘুষ কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের একটি আদালতে ভারতীয় আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। অভিযোগ দায়ের ছাড়াও তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে মার্কিন আদালত।
অভিযোগে বলা হয়, গৌতম আদানি ও তার সহযোগীরা গ্রিন এনার্জির জন্য সৌরশক্তি প্রকল্পের কাজ পেতে ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তাদের ২৫ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি ঘুষ দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে তারা বিনিয়োগকারীদের কাছে এ বিষয়ে মিথ্যা বলেছিলেন। নবায়নযোগ্য জ্বালানির এই কোম্পানি ২০ বছরে দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি লাভ করবে বলে আশা করা হয়েছিল।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, আদানি গ্রিন এনার্জি যুক্তরাষ্ট্র থেকে, আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে বিনিয়োগের অর্থ সংগ্রহ করার চেষ্টা করে। এ জন্য তারা বন্ড ছাড়ে। এ ক্ষেত্রে তারা প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতিবিরোধী ও ঘুষবিরোধী প্রচেষ্টার বিষয়ে মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর তথ্য-উপাত্ত দিয়েছিল।
প্রসিকিউটররা জানান, গৌতম আদানি, তার ভাইয়ের ছেলে সাগর আদানি, আদানি গ্রিন এনার্জির একজন নির্বাহী কর্মকর্তা, সাবেক সিইও ভিনিত জৈন ঋণদাতা ও বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে তাদের দুর্নীতিন কথা গোপন করে ৩০০ কোটি ডলারের বেশি ঋণ ও বন্ড সংগ্রহ করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি ব্রায়ান পিস এক বিবৃতিতে অভিযোগ ঘোষণা করে বলেছেন, “অভিযুক্ত হিসাবে আসামিরা বিলিয়ন ডলার মূল্যের চুক্তি সুরক্ষিত করার জন্য ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ দেয়ার জন্য একটি বিস্তারিত স্কিম সাজিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে মূলধন সংগ্রহ করার জন্য ঘুষের স্কিম নিয়ে মিথ্যা কথা বলেছিল।” এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে সিকিউরিটিজ জালিয়াতি, সিকিউরিটিজ জালিয়াতির ষড়যন্ত্র এবং গোপন বার্তা জালিয়াতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে। মার্কিন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনেও (এসইসি) গৌতম ও সাগর আদানির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
এক সংবাদ বিবৃতিতে এসইসি জানিয়েছে, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে আদানি গ্রিন এনার্জি ৭৫ কোটি ডলার সংগ্রহ করার সময় এই ঘুষ কেলেঙ্কারিতে গৌতম ও সাগর আদানি ছিলেন। এই সময় যুক্তরাষ্ট্রও থেকে সাড়ে ১৭ কোটি ডলার সংগ্রহ করেন তারা। আদালতের নথির বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, গৌতম আদানি ও সাগর আদানির বিরুদ্ধে একজন বিচারক গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন। প্রসিকিউটররা এই পরোয়ানা বিদেশি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর কাছে হস্তান্তর করার পরিকল্পনা করেছেন।
এ বিষয়ে আদানি গ্রুপের প্রতিনিধিরা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। এ ছাড়া ভারতীয় সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড (সেবি)সহ ভারতীয় কর্তৃপক্ষও মার্কিন অভিযোগের বিষয়ে মন্তব্যের অনুরোধে জবাব দেয়নি। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে মামলা এবং গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির খবরে সাথে সাথেই ধস নেমেছে আদানির ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যে। মাত্র দুই বছরের মাথায় দ্বিতীয়বারের মতো বড় ধরনের সংকটে পড়ল ভারতীয় ব্যবসায়িক গ্রুপটি। বছর দুয়েক আগে মার্কিন সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ শেয়ারমূল্য কারচুপির অভিযোগ তুললে এমন সংকটে পড়েছিল আদানি গ্রুপ।
রয়টার্স জানিয়েছে, আজ বৃহস্পতিবার আদানি গ্রিন এনার্জির শেয়ারদর ১৭ শতাংশ কমেছে। আদানি গোষ্ঠীর অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর ১০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। শুধু বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) মাকের্ট থেকে ২৮ বিলিয়ন বা ২৮০০ কোটি ডলার মূল্য হারিয়েছে গোষ্ঠীটি। এর ফলে তাদের সামগ্রিক মূলধন কমে ১৪১ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। এবারের অভিযোগে মূল কেন্দ্রে থাকা প্রতিষ্ঠান আদানি গ্রিন এনার্জি তাদের ৬০ কোটি ডলারের বন্ড বিক্রি বাতিল করেছে।
আরও পড়ুন
- উত্তর গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৮৮ ফিলিস্তিনি নিহত
- লেবাননে সংঘাতে ২শ’র ও বেশি শিশু নিহত : ইউনিসেফ
- গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতায় আরও ১১১ জন নিহত
- ভারতের মণিপুর রাজ্যে ফের সহিংসতা, কারফিউ জারি
- ইমরানের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভে উত্তাল পাকিস্তান
- গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতায় আরও ৪৭ ফিলিস্তিনি নিহত
- চীনে ‘এয়ার শো’তে গাড়িচাপায় ৩৫ জনের প্রাণহানি
- দু'দিনের সফরে ঢাকায় আসছেন ব্রিটিশ আন্ডার সেক্রেটারি