গডফাদার ও টাকা পাচারকারীদের জননী শেখ হাসিনা : রিজভী
শনিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৪ ০৭:১৬ পিএম | আপডেট: শনিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৪ ০৭:১৬ পিএম
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার শাসনামলের মতো যেন আদালত পরিচালিত না হয় সেই নির্মম আদালত, নির্মম বিচারব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে দেশে সত্যিকার অর্থে একটি আইনের শাসনের সরকার প্রতিষ্ঠিত হোক।
আজ শনিবার বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা জানানো শেষে এসব কথা বলেন তিনি। বিএনপির প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিবকে সঙ্গে নিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে যান তিনি।
রিজভী বলেন, গতকাল একটা ভিডিও ভাইরাল হয়েছে; শেখ হাসিনার সঙ্গে গোপালগঞ্জের একজন ছাত্রলীগ নেতার। ছাত্রলীগ নেতা বলছেন; আপা পুলিশ হানা দেয় প্রতিদিন পাঁচ-ছয়জনকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। অথচ আপনি তো ছিলেন প্রধানমন্ত্রী, যিনি সত্যিকার প্রধানমন্ত্রী থাকেন সেখানে আইনের শাসন থাকে। যিনি অপরাধ করে অপরাধীদের সাজা হয় সে যে দলেরই হোক। আপনি কী জানতেন না আপনি পালিয়ে যাওয়ার পর মাত্র এক মাসও হয়নি স্বেচ্ছাসেবক দলের দিদারকে গোপালগঞ্জে প্রকাশ্যে দিবালোকে ছাত্রলীগ, যুবলীগ কুপিয়ে হত্যা করেছে। এরপরও পুলিশ তাদের পূজা করবে? তাদের ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানাবে। আপনি গতকাল ছাত্রলীগের এই ছেলের সঙ্গে কথোপকথন করে আপনি যে বর্বর, নিষ্ঠুর, রক্ত পান করা ছাড়া অন্য কোনো বিবেক আপনার নেই, মানবতা নেই সেটা আবার প্রমাণ করলেন। অথচ আপনি বলতে পারতেন; ওইখানে হত্যাকান্ড হলো কেন? ওইখানে অন্য একটি রাজনৈতিক দলের নেতা মারা গেল কেন? বলেননি কারণ আপনি ছিলেন আওয়ামী লীগের জননী, গডফাদারদের জননী, টাকা পাচারকারীদের জননী।’
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, এই কারণেই বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের বাইরে যে গণতন্ত্রের জন্য কথা বলেছে তাকে খুন-গুম-হত্যা করতে, তাদের আয়নাঘরে আটকে রাখতে আপনার মনে এতটুকু বিবেকবোধ কাজ করেনি। এখন আপনি উসকানি দিচ্ছেন; রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকতে যেভাবে ছাত্রলীগ, যুবলীগকে দিয়েছেন; একই কায়দায় উসকানি দিয়ে একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করে একটা রক্তাক্ত বাংলাদেশের আবহ তৈরি করে আপনি মনে করেছেন সেই সুযোগে বাংলোদেশে প্রবেশ করবেন। তা এই দেশের মানুষ হতে দেবে না।
ছাত্রদলের সাবেক এই সভাপতি বলেন, মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক, আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণের উদ্দেশ্যে এখানে এসেছি। আপনারা জানেন মিথ্যা মামলায় বিএনপির প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিবকে গ্রেফতার করা হয়েছিল; গ্রেফতার করে তাকে সাজা দেয়া হয়েছে ৭ বছর। একটা অনাচারমূলক রাষ্ট্রের দৃষ্টান্ত; শেখ হাসিনা যে মাফিয়া রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করেছিলেন সেখানে হাবিবুল ইসলাম হাবিবকে ৭০ বছরের সাজা দেয়া হয়েছিল। অভিযোগ হাবিবুল ইসলাম হাবিব নাকি শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা করেছিল। আমরা সেদিনের ঘটনা জানি, হাবিবুল ইসলাম হাবীব ঢাকায় অবস্থান করছিল। আমাদের একটি প্রোগ্রাম ছিল ঢাকায় অথচ তার নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে পরিকল্পিত মামলা সাজিয়ে এই মামলাটি দেয়া হয়। হাবিবুল ইসলাম হাবিব ’৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের একজন তেজস্বী নেতা। সে ডাকসুর মিলনায়তন বিষয়ক সম্পাদক ছিল। এরপর সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সভাপতি এবং নির্বাচিত এমপি; তার মতো একজন সাহসী তারুণ্যদীপ্ত নেতাকে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নেতাকে যদি ধ্বংস করা যায় হাসিনা অত্যন্ত আনন্দ লাভ করেন তার ফ্যাসিবাদী কায়েম হয়।
তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন আজকে সাতক্ষীরা থেকে ছুটে আসা কত মানুষ শহীদ জিয়াউর রহমানের মাজারে অবস্থান করছেন। এতেই প্রমাণিত হয় তার জনপ্রিয়তা ও দক্ষ সাংগঠনিক যোগ্যতা। এটা শেখ হাসিনা পছন্দ করেননি। তাই মিথ্যা মামলা দিয়ে পর্যুদস্ত করার জন্য সেসহ (হাবিবুল) ৪৯ জন সাজা দেয়া হয়েছে এবং কারাগারে একজন মারা গেছে। এই নিপীড়ন শেখ হাসিনা চালিয়েছেন। এই নিপীড়ন অব্যাহত রেখেছে গণতন্ত্রকামী মানুষের বিরুদ্ধে। সর্বশেষ স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের রক্ত পান করেছেন তিনি। তারপরও টিকে থাকতে চেয়েছেন; ক্ষমতা ধরে রাখতে চেয়েছেন। তার যে লুপপাটের অভয়ারণ্য তৈরি করেছিল বাংলাদেশে সেটা অব্যাহত রাখতে তিনি এমনভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৈরি করেছিলেন যাদের বিবেক আগেই কেড়ে নিয়েছিলেন। তাই নির্বিচারে স্কুলের ছাত্র, রাতুলের মতো বগুড়ার শিক্ষার্থী এবং কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের গুলি করতে দ্বিধা করেননি, হত্যা করতে দ্বিধা করেননি। রিক্সাচালকদের হত্যা করতে দ্বিধা করেননি। এবং তার আগে ১৫ বছর গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ তাদের নেতাকর্মীকে গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা করে শেখ হাসিনা মনে করেছিলেন তার এই যে স্বর্গরাজ্য, লুটপাট ও মাফিয়া রাজ্য চিরজীবনের জন্য বহাল থাকবে। উনার (প্রধানমন্ত্রী) পিয়নের ৪০০ কোটি টাকার দুর্নীতি যেটা তিনি গর্ব করে বলেন। এরকম আরো কত ঘটনা ঘটেছে প্রতিদিন।
রিজভী বলেন, ওবায়দুল কাদেরের সড়ক বিভাগ থেকে ১৫ বছরে কত হাজার কোটি টাকা গেছে, বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট থেকে হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে এখন প্রতিদিন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হচ্ছে। সতুরাং এই ধরনের লুণ্ঠন ও টাকা পাচারের দেশ তৈরি করার জন্য তিনি কাজ করেছেন।
এ সময় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেল, ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীমসহ শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন
- রাজধানীর মোহাম্মদপুরে শহীদ ও আহত পরিবারের পাশে তারেক রহমান
- ওবায়দুল কাদের কীভাবে দেশ ছাড়ল, জবাব চান জয়নুল আবদীন ফারুক
- লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ
- প্রয়োজনীয় সংস্কার করে আগামী বছরের মধ্যেই নির্বাচন করা সম্ভব : গণতন্ত্র মঞ্চ
- নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং হবে, নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে প্রস্তুুতি নিতে হবে : দুদু
- দীর্ঘ দেড় যুগ ধরে মানুষ ভোট দেয়ার প্রতিক্ষায় আছে : কাইয়ুম চৌধুরী
- মুন্সিগঞ্জে বিএনপির রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা নিয়ে কর্মশালা
- নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য অস্পষ্ট : মির্জা ফখরুল