1. »
  2. রাজনীতি

প্রশাসনের মধ্যে ‘স্বৈরাচারের ভূত’ বসে আছে : মির্জা ফখরুল

শনিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৪ ০৭:০৬ পিএম | আপডেট: শনিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৪ ০৭:০৬ পিএম

প্রশাসনের মধ্যে ‘স্বৈরাচারের ভূত’ বসে আছে : মির্জা ফখরুল

প্রশাসনের মধ্যে ‘স্বৈরাচারের ভূত’ বসে আছে অভিযোগ করে এদেরকে তাড়াতে না পারলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোনো প্রচেষ্টা সফল হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। 

আজ শনিবার দুপুরে রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউট মিলনায়তনের এক শিক্ষক সমাবেশে দেশের প্রশাসনের অবস্থা তুলে ধরে তিনি এ মন্তব্য করেন। 

রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের উদ্যোগে বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে এই শিক্ষক সমাবেশ হয়। প্রতিকূল আবহাওয়া উপেক্ষা করে সারা দেশ থেকে কয়েক হাজার শিক্ষক এই সমাবেশে যোগ দেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে বলতে চাই, এই যে ভূতগুলোকে নিয়ে যারা এতদিন জনগণের ওপর অত্যাচার-নিপীড়ন চালিয়েছে, যারা দুর্নীতি করেছে, লুটপাট করেছে সেই ভূতেরা কিন্তু এখনো প্রশাসনের মধ্যে আছে। এই ভূতগুলোকে দূর করতে হবে। নইলে কোনো কিছুই করতে আপনারা সক্ষম হবেন না।

যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন চাই বলে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা এখন বর্তমান যে সরকার এসেছে প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস সাহেবের নেতৃত্বে। এই সরকার তো আন্দোলন যারা করেছে আমরা সবাই মিলে এই সরকারকে দায়িত্ব দিয়েছি দেশকে সঠিক দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আমরা তাদের অবশ্যই সময় দিচ্ছি, সময় দেব। কিন্তু বারবার প্রশ্ন আসে যে, কতদিন সময় দেবেন? আমরা সেই পর্যন্ত সময় দেব যে পর্যন্ত একটা যৌক্তিক সময়ে তারা (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) একটা নির্বাচনের ব্যবস্থা তৈরি করতে পারেন। আমরা বিশ্বাস করি, রাজনীতি করি, আন্দোলন করেছি, জান দিয়েছি-প্রাণ দিয়েছি একটা লক্ষ্যে যে আমরা জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই, আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই। 

তিনি বলেন, আমরা কোনো বিরাজনীতিকরণের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। আবারই মাইনাস টু দেখতে চাই না। আমরা আবার এই মৌলবাদ বা জঙ্গিবাদকে দেখতে চাই না। আমরা আবার সন্ত্রাসকে দেখতে চাই না। আমরা সত্যিকার অর্থে দেশে একটা ‍সুস্থ উদারপন্থি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা দেখতে চাই। তার জন্য আমরা তাদের হাতেই (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) দায়িত্ব দিয়েছি। আমরা মনে করেছি যে, এরা যোগ্য মানুষ তারা কাজ করছেন। তাদের অতি দ্রুততার সঙ্গে কাজ করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।

মির্জা ফখরুল আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আমরা কখনোই ব্যর্থ হয়নি, আমরা ’৫২ সালে জয়ী হয়েছি, ’৬৯-এ জয়ী হয়েছি, আমরা ’৭১-এ জয়ী হয়েছি, আমরা ’৯০-এ জয়ী হয়েছি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বেৃ আমাদের সেই আন্দোলন শুরু হয়েছিল, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে। আমরা ইনশাল্লাহ এবারও জয়ী হবো।

শিক্ষক জাতীয়করণ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, জাতীয়করণ হলেই আপনাদের সব সমস্যার সমাধান আসবে না। শিক্ষার মান বাড়াতে হবে, যোগ্য মানুষকে নিয়ে আসতে হবে। আমাকে একটা কাগজ তুলে দিয়েছেন আপনাদের নেতা সেলিম ভূঁইয়া সাহেব যে, ম্যাডামের একটা ঘোষণা ছিল চাকরি জাতীয়করণ করার জন্য। ম্যাডামের ঘোষণা তো সকলের জন্য শিরোধার্য আমাদের জন্য। সে জন্য সরকারে আসতে হবে তো। সরকারে কখন আসতে পারবেন? জনগণ যদি ভোট দিয়ে সরকারে পাঠায়। ভোট দেবে কখন? যখন আপনি জনগণের কাছে প্রমাণিত হবেন আপনি যোগ্য, আপনি আগামী ৫ বছর তাদের সুষ্ঠুভাবে সেবা করতে পারবেন, কাজ করতে পারবেন। কিন্তু আমরা সব ক্ষেত্রে কি সেটা করতে পারছি।

তিনি বলেন, পত্র-পত্রিকায় বাইরে বিভিন্ন সমালোচনা হচ্ছে। এই সমালোচনা যাতে না হয় সে জন্য আমাদের কাজ করতে হবে। আমরা চাই না যারা দুর্নীতি করে, যারা চাঁদাবাজি করে, জমি দখল করে তারা বিএনপির লোক নয় তারা দুর্বৃত্ত। দল থেকে কিছু লোকের বিরুদ্ধে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাহেব ব্যবস্থা নিয়েছেন। আমরা এটা নেব। 

শিক্ষকদের দলকানা হলে চলবে না বলে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, আরেকটা কথা বলি, এটা আমার নিজের কথা শিক্ষকদের দলকানা হলে চলবে না। শিক্ষকদের দলীয় রাজনীতি থেকে একটু দূরে থাকতে হবে। তা না হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকবে না। কথাটা আপনাদের ভালো লাগবে না আামি জানি। আওয়ামী লীগ যে অবস্থা তৈরি করে দিয়ে গেছে সেই পিয়ন থেকে গভার্নিং বডির প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত আওয়ামী লীগের লোক। এই অবস্থা থেকে আমাদের বের করে নিয়ে আসতে হবে বের করে নিয়ে এসে ভালো সুস্থ পরিবেশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যারা জনগণের সাথে সম্পর্ক আছে, যারা শিক্ষিত, যারা কাজ করতে পারবেন তাদের নিয়ে আসতে হবে। এটা যদি আপনারা মন থেকে করতে পারেন তাহলে পরিবর্তন হবে, নইলে পরিবর্তন হবে না।

প্রয়োজনে আবার রাজপথে নামতে হবে, পরিবর্তনে দেশে নতুন সম্ভাবনার আশার কথা উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমি খুব আশাবাদী মানুষ। অনেকেই বলে যে কি হলো? বলি এ পর্যন্ত তো হলো হাসিনা পালায়ে গেছে, এই পর্যন্ত তো হলো। পার্লামেন্ট ভেঙে গেল এটা হলো না, ম্যাডাম মুক্তি পেলেন এটা হলো না। এখন পরিবর্তন আনতে হবে। এর জন্য কাজ করতে হবে। দরকার হলে আবার রাজপথে নামতে হবে, দরকার হলে আবার বুকের রক্ত দিতে হবে। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে এদেশের সত্যিকার অর্থে জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা করব, ম্যাডামের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করব, তারেক রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করব।

শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের সভাপতি অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে সমাবেশে গণঅধিকার পরিষদের আহŸায়ক নুরুল হক নূরসহ শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের চৌধুরী মূগিস উদ্দিন মাহমুদ, জাকির হোসেনসহ নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।