1. »
  2. শিক্ষা

ছাত্রলীগের বাধা উপেক্ষা করে ঢাবিতে কোটাবিরোধী বিক্ষোভ শুরু

শনিবার, ৬ জুলাই, ২০২৪ ০৫:২২ পিএম | আপডেট: শনিবার, ৬ জুলাই, ২০২৪ ০৫:২২ পিএম

ছাত্রলীগের বাধা উপেক্ষা করে ঢাবিতে কোটাবিরোধী বিক্ষোভ শুরু

সরকারি চাকরিতে বেতন কাঠামোর ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডে (আগের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির) মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত বহালে উচ্চ আদালতের রায়ের প্রতিবাদে এবং ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে লাগাতার কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্বঘোষিত বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়েছে।

আজ শনিবার (৬ জুলাই) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে জমায়েত হয়ে এখান থেকে সোয়া ৩টায় মিছিল বের করে। মিছিলটি হাজী মুহম্মদ মুহসিন হল, ভিসি চত্বর, টিএসসি, জগন্নাথ হলের মোড়, বকশিবাজার, বুয়েট, পলাশী, আজিমপুর, ইডেন কলেজ, নীলক্ষেত ও রাজু ভাস্কর্য হয়ে শাহবাগ গিয়ে অবস্থান করার কথা রয়েছে। শাহবাগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে এবং সেখানে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

এদিকে এই বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নিতে চাওয়া শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হল থেকে বের হতে দেননি বলে অভিযোগ উঠেছে। বরং কোটাবিরোধী এই কর্মসূচির সময়েই মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কর্মসূচি রেখে সবাইকে জোরপূর্বক সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

মিছিল শুরুর আগে কোটা আন্দোলনের এক সমন্বয়ক আব্দুল্লাহ সালেহীন অয়ন বলেন, সূর্যসেন হলের গেটে ছাত্রলীগ অবস্থান নিয়েছে। তারা কাউকে বের হতে দিচ্ছে না।

ফজলুল হক মুসলিম হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের হলের ছাত্রলীগের ক্যান্ডিডেটরা নিচে দাঁড়িয়ে থাকার কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বের হতে পারেনি। তারা এই সময়ে মধুর ক্যান্টিনে প্রোগ্রামের জন্য নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।

এদিকে, বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের কর্মসংস্থানবিষয়ক সম্পাদক পল্লব রানা পারভেজের ‘সাদ্দাম ভাইয়ের বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগ’ নামক মেসেঞ্জার গ্রুপে দেওয়া একটি নির্দেশনার স্ক্রিনশট গণমাধ্যমের হাতে এসেছে। এতে তিনি লেখেন, হলে থাকার ইচ্ছে না থাকলে হল ছেড়ে চলে যাও, হলে থাকতে হলে সবার প্রোগ্রাম (ছাত্রলীগের) করতে হবে। যে যেখানেই থাকো হল গেটে আসবা দ্রুত।

এ ছাড়া বরাবরই কোটা আন্দোলনের শুরু থেকেই প্রতি হলের ছাত্রলীগ নেতারা কোটা এতে অংশ নিতে শিক্ষার্থীদের বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছে বলে অভিযোগ শোনা যাচ্ছে।

এর আগে, গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত অবস্থান কর্মসূচিতেও প্রোগ্রামের অজুহাত দিয়ে কিংবা সরাসরি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংশ্লিষ্ট হতে বাধা দেয় ছাত্রলীগ। এদিন বিজয় একাত্তর, ফজলুল হক মুসলিম, জহুরুল হক ও এফ রহমান হলসহ প্রায় প্রতিটি হলের গেটে অবস্থান নেন ছাত্রলীগের ক্যান্ডিডেটরা। বিশেষ করে সূর্যসেন হল গেট তালা লাগিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং জসিম উদ্দিন হলের চারতলায় আটক রাখা হয় শিক্ষার্থীদের।

চলমান বিক্ষোভ কর্মসূচিতে আন্দোলনকারীদের ‘কোটা প্রথা বাতিল চেয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়।

আন্দোলনকারীরা জানান, ২০১৮ সালে সারা বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে অন্যায্য ও অযৌক্তিক ৫৬ শতাংশ কোটার বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। গণআন্দোলনের প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ৪ঠা অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সরকারি চাকরি (নবম-ত্রয়োদশ গ্রেড) থেকে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের ঘোষণা দিয়ে পরিপত্র জারি করে। কোটা বৈষম্য নিরসন ছিল শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের প্রাণের দাবি। গত ছয় বছর ধরে সেই অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে নিয়োগ হচ্ছে এবং একটি মেধাভিত্তিক দক্ষ প্রশাসন তৈরিতে শিক্ষার্থীরা নিজেদের প্রস্তুত করছে।

তারা বলেন, অত্যন্ত দুঃখের বিষয় গত ৫ জুন মহামান্য হাইকোর্ট সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহাল করতে রায় দিয়েছে এবং ২০১৮ সালে জারিকৃত সরকারের পরিপত্রকে অবৈধ ঘোষণা করেছে। 

আমরা মনে করি, হাইকোর্টের রায়ে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি। পুনরায় কোটা ফিরে আসা মানে দেশের লাখ লাখ তরুণ-তরুণীদের দাবি ও আন্দোলনের সঙ্গে প্রহসন। মুক্তিযুদ্ধের যে মূলমন্ত্র- সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার তা নিশ্চিত করতে এবং একটি দক্ষ প্রশাসন গড়তে মেধাভিত্তিক নিয়োগের বিকল্প নেই।

তারা আরও বলেন, এ কোটা বৈষম্য নিরসন এবং দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে চার দফা দাবি জানাচ্ছি। সেগুলো হলো- ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখতে হবে; ১৮ এর পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সব গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে এবং কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। সেক্ষেত্রে সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে; সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্যপদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে; দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।