ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২৬২ জন
সোমবার, ২৪ জুন, ২০২৪ ০৫:৫৫ পিএম | আপডেট: সোমবার, ২৪ জুন, ২০২৪ ০৫:৫৫ পিএম
এবারের ঈদযাত্রার সড়ক দুর্ঘটনায় ৯ শত ৯৮ কোটি ৫৫ লাখ ৩৭ হাজার টাকার মানব সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। গত ১১-২৩ জুন পর্যন্ত ১৩ দিনে এই সম্পদের ক্ষতি উল্লেখ করে দুর্ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সামাজিক প্রতিষ্ঠান রোড সেফটি ফাউন্ডেশন।
আজ সোমবার (২৪ জুন) প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, এবারের ঈদযাত্রায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণহানি বেড়েছে ১৩ দশমিক ৩১ শতাংশ। ঈদুল আজহার আগে-পরে ১৩ দিনে দেশে ২৫১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৬২ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে কমপক্ষে ৫৪৩ জন। নিহতের মধ্যে নারী ৩২, শিশু ৪৪। ১২৯টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ১০৪ জন, যা মোট নিহতের ৩৯ ভাগ ৬৯ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৫১ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
এই সময়ে ৭টি নৌ-দুর্ঘটনায় ১২ জন নিহত এবং ৩ জন আহত হয়েছে। ১৬টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ১৪ জন নিহত এবং ৮ জন আহত হয়েছে। রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ৯৭টি ঘটেছে জাতীয় মহাসড়কে। ৯১টি আঞ্চলিক সড়কে, ২৮টি গ্রামীণ সড়কে, ৩২টি শহরের সড়কে এবং ৩টি অন্যান্য স্থানে সংঘটিত হয়েছে।
দুর্ঘটনাসমূহের ৬৪টি মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১০৩টি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ৪৯টি পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেয়া, ২৭টি যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ৮টি অন্যান্য কারণে ঘটেছে।
মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা যায়, নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে প্রায় ৪১ ভাগ। মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটেছে ২৭ ভাগ। অন্য যানবাহন দ্বারা মোটরসাইকেলে চাপা/ধাক্কায় দুর্ঘটনা ঘটেছে প্রায় ৩২ ভাগ।
মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ২৮ দশমিক ৩৫ শতাংশের বয়স ১৩ থেকে ১৭ বছর। ৪৭ দশমিক ৭৬ শতাংশের বয়স ১৮ থেকে ৩৫ বছর এবং ২৩ দশমিক ৮৮ শতাংশের বয়স ৩৬ থেকে ৬০ বছর।
ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি ৭২টি দুর্ঘটনায় ৬৭ জন নিহত হয়েছে। সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম ৮টি দুর্ঘটনায় ৭ জন নিহত হয়েছে। রাজধানীতে ১৮টি দুর্ঘটনায় ১৪ জন নিহত এবং ১১ জন আহত হয়েছে।
ঈদুল আজহা উদযাপনকালে সংঘটিত সড়ক দুর্ঘটনায় যে পরিমাণ মানব সম্পদের ক্ষতি হয়েছে তার আর্থিক মূল্য ৯ শত ৯৮ কোটি ৫৫ লাখ ৩৭ হাজার টাকা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, যেহেতু সড়ক দুর্ঘটনার অনেক তথ্য অপ্রকাশিত থাকে, সেজন্য এই হিসাবের সাথে আরও ৩০ ভাগ যোগ করতে হবে।
সব মিলিয়ে ঈদ উদযাপনকালে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন গড়ে ২০ দশমিক ১৫ জন নিহত হয়েছে। গত বছরের ঈদুল আজহায় প্রতিদিন গড়ে নিহত হয়েছিল ২১ দশমিক ৬ জন। এই হিসাবে গত বছরের তুলনায় এবছর দুর্ঘটনায় প্রাণহানি কমেছে ৬ দশমিক ৭১ শতাংশ। তবে এটা কোনো টেকসই উন্নতির সূচক নয়, কারণ সড়ক পরিবহন খাতে ব্যবস্থাপনাগত কোনো উন্নতি হয়নি।
গত বছরের ঈদুল আজহা উদযাপনকালের তুলনায় এবছর বাইক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি বেড়েছে ১৩ দশমিক ৩১ শতাংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ঈদযাত্রায় রাজধানী ঢাকা থেকে কমবেশি ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ ঘরমুখী যাত্রা করেছেন এবং প্রায় সাড়ে ৪ কোটি মানুষ আন্তঃজেলায় যাতায়াত করেছেন। উত্তর বঙ্গগামী সড়কের চন্দ্রা ও টাঙ্গাইলে যানজট হয়েছে। পদ্মা সেতুর টোল প্লাজায় এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেও যানজট হয়েছে, তবে অসহনীয় মাত্রায় হয়নি। অনেক পরিবহন মালিক যাত্রীদের নিকট হতে বেশি ভাড়া আদায় করেছে। বিআরটিএ এই ভাড়া নৈরাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। ট্রেনে কিছুটা শিডিউল বিপর্যয় ঘটেছে। টিকেট কালোবাজারি হয়েছে। নৌ-পথে স্বস্তি থাকলেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয়েছে। ঈদের ফিরতি যাত্রায় বাসে, লঞ্চে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। ঈদ উদযাপনকালে যে সকল দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটেনি, শুধু আহত হয়েছে- সেসব দুর্ঘটনার অধিকাংশই গণমাধ্যমে আসেনি। ফলে দুর্ঘটনায় আহতের প্রকৃত চিত্র জানা যায়নি।
প্রতিবেদনে সড়ক দুর্ঘটনার ১০টি কারণ উল্লেখ করে তা রোধে ১২টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে।
আরও পড়ুন
- অক্টোবরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৪৭৫
- টাঙ্গাইলে বাস-পিকআপ সংঘর্ষ, নিহত ৪
- পল্টনে বাস-ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ১
- নারায়ণগঞ্জে গ্যাস লাইনের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ, দগ্ধ ৭
- সাতক্ষীরায় ট্রাকচাপায় ৩ মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
- ধামরাইয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস খাদে, হতাহত অর্ধশতাধিক
- দিনাজপুরে দুই ট্রাকের সংঘর্ষ, নিহত ১
- বগুড়ার শেরপুরে ট্রাকচাপায় দুই নারীর মৃত্যু