1. »
  2. আন্তর্জাতিক

বিশ্বব্যাপী জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ১২০ মিলিয়নে পৌঁছেছে : জাতিসংঘ

বৃহস্পতিবার, ১৩ জুন, ২০২৪ ০১:০৫ পিএম | আপডেট: বৃহস্পতিবার, ১৩ জুন, ২০২৪ ০১:০৫ পিএম

বিশ্বব্যাপী জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ১২০ মিলিয়নে পৌঁছেছে : জাতিসংঘ

বিশ্বব্যাপী জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ১২০ মিলিয়ন বা ১২ কোটিতে পৌঁছেছে বলে তথ্য দিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর। সংস্থাটি বলছে গত ১২ বছরে বিশ্বের কোথাও না কোথাও সাধারণ মানুষকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা হয়েছে। 

বৃহস্পতিবার ইউএনএইচসিআর এর এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই মর্মান্তিক তথ্য। সম্প্রতি গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনকে কেন্দ্র করে শরণার্থী সমস্যা আরও প্রকট হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট ওই সংস্থাটি। 

ইউএনএইচসিআর তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, নতুন পরিসংখ্যান পেছনের সকল রেকর্ড ছাপিয়ে গেছে। বিশ্বে বিভিন্ন দ্বন্দ্ব ও সংঘাতের ফলে শরণার্থী সংকট আগের তুলনায় আরও উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ইউএনএইচসিআর এর প্রতিবেদনকে উদ্ধৃত করে এ খবর দিয়েছে তুর্কি বার্তা সংস্থা আনাদোলু।

এতে বলা হয়েছে, বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে যে পরিমাণ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে তাদের বসবাসের জন্য জাপানের মতো একটি দেশের প্রয়োজন হবে। জাপান বিশ্বের ১২তম বৃহত্তম দেশ।

ইউএনএইচসিআর এর ওই প্রতিবেদনে সুদানের দীর্ঘ সংঘাতের দিকেও ইঙ্গিত করেছে। ২০২৩ সালের এপ্রিল পর্যন্ত দেশটিতে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছায়। জাতিসংঘের তথ্য বলছে, সেসময় সুদানে প্রায় ৭১ লাখ মানুষকে তাদের বসতবাড়ি থেকে উৎখাত করা হয়েছে।

যাদের প্রায় ১৯ লাখ লোক দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। ২০২৩ সাল শেষে সুদানে বাস্তুহারা লোকের সংখ্যা পৌঁছায় ১ কোটি ৮ লাখে। এছাড়া ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর কঙ্গো এবং মিয়ানমারে সংঘাতের ফলে লাখ লাখ মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

জাতিসংঘের ফিলিস্তিন শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় ইসরাইলের নৃশংস হামলার ফলে গত আট মাসে অন্তত ১৭ লাখ মানুষ তাদের বসতবাড়ি হারিয়েছে। যা গাজার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭৫ শতাংশ। গাজায় বাস্তুচ্যুত হওয়া এসব জনগণের বেশির ভাগই বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। বাস্তুচ্যুত এসব গাজাবাসীকে জোরপূর্বকভাবে উৎখাত করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছে জাতিসংঘের ওই সংস্থা।

জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদনে সিরিয়ার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাস্তুচ্যুতির ঘটনা ঘটেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সিরিয়াতে। সেখানে জোরপূর্বক অন্তত ১ কোটি ৩৮ লাখ সাধারণ বাসিন্দাকে তাদের ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে।

ক্রমবর্ধমানভাবে বাস্তুহারা লোকজনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় এ বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি। তিনি বাস্তুচ্যুতির এই ঘটনাকে পৃথিবীর জন্য ভয়াবহ ট্র্যাজেডি বলে উল্লেখ করেছেন। এছাড়া এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে বিশ্বের সরকার প্রধানদের একজোট হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার বলেছেন, এভাবে সারা বিশ্বে সাধারণ মানুষকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার ঘটনার পেছনে অগণিত মানবিক ট্র্যাজেডি রয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এই দুর্ভোগের অবসানে এগিয়ে আসতে হবে।

এখনই যুদ্ধরত দেশ গোষ্ঠীগুলোর আন্তর্জাতিক যুদ্ধনীতি এবং আইনকে সম্মান দেখানোর এখনি উপযুক্ত সময় মন্তব্য করে ফিলিপ্পো আরও বলেন, সহযোগিতা এবং সংঘাত মোকাবিলার জন্য সমন্বিত প্রচেষ্টা ছাড়া এই সমস্য সমাধানে কার্যকরী ভূমিকা পালন না করলে এই সমস্যা আন্তর্জাতিকভাবে আরও প্রকট হতে পারে। এক্ষেত্রে বিশ্ববাসী এক ভয়াবহ সংকটের মধ্যে পড়বে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি। এভাবে সাধারণ মানুষকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা মানবাধিকার লঙ্ঘন। এছাড়া তিনি বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনে বাস্তুচ্যুত মানুষের ব্যাপক ভূমিকার প্রতিও ইঙ্গিত দেন।