1. »
  2. মতামত

জিয়াউর রহমানের বদৌলতে এখনো সচল দেশের অর্থনীতির চাকা

মঙ্গলবার, ৪ জুন, ২০২৪ ০৫:২৬ পিএম | আপডেট: মঙ্গলবার, ৪ জুন, ২০২৪ ০৫:৫৬ পিএম

জিয়াউর রহমানের বদৌলতে এখনো সচল দেশের অর্থনীতির চাকা

বাংলাদেশে সমসাময়িক বছরগুলোতে একটা ট্রেন্ড বা ব্যবসা চালু হয়েছে নাম 'বুদ্ধিজীবি'। যার অন্যতম কারন গত এক দশক ধরে বুদ্ধিজীবিদের এক বিশাল কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে দেশে, যথেষ্ট চাহিদা তৈরি হয়েছে দেশী বিদেশী ডিজিটাল প্লাটফর্ম সহ বিভিন্ন মিডিয়া চ্যানেলে। চাহিদা অনুযায়ী যোগান না থাকায় হাউজ গুলোর প্রয়োজনেই তাদের চাহিদা মেটাতে তারাই বুদ্ধিজীবি তৈরি করছেন। বুদ্ধিজীবি হওয়ার একটা সহজ মন্ত্রও তারা আবিস্কার করেছেন সেটা হলো জিয়াউর রহমান ও তার পরিবার অথবা বিএনপি তথা সরকার বিরোধীদের বিরোধীতা করা। বুদ্ধিজীবিদের নিম্নোক্ত যোগ্যতা থাকলেই চলবে; যৌক্তিক না প্রপাগান্ডা সেটা কোন বিষয় না, বিষয় হলো চোখে চোখ রেখে মিথ্যার পক্ষে অমূলক যুক্তি উত্থাপন করে বিরোধিতা করতে পারা, সেটা না পারলে জোর গলায় অসভ্যতা করতে পারা, সেটাও যদি আপনি না পারেন এবং ব্যর্থ হন তবে বিষয়বস্তুর বাহিরে গিয়ে চরিত্র হনন করার যোগ্যতা আবশ্যকীয়। 

শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তম এর ৪৩তম শাহাদাৎ বার্ষিকীতে এই লেখার উদ্দেশ্য মরহুমের কর্মকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা এবং সেসকল বুদ্ধিজীবিদের চেতনাকে যতসামান্য আন্দোলিত করা, বলতে পারেন নুন্যতম বিবেক জাগ্রত করার ক্ষীণ চেষ্ঠা মাত্র।

বাংলাদেশে বর্তমানে জীবিত দেশী বিদেশী পদকপ্রাপ্ত, খেতাবধারী অর্থনীতিবীদ আছেন যারা কিনা বিভিন্ন সময়ে জিয়াউর রহমান ও তার পরিবারের বিরোধীতা করেন অথবা জেনে শুনে সঠিক ইতিহাস এড়িয়ে চলেন, তাদের মেধার প্রতি আমি যথাযোগ্য সন্মান রেখেই প্রশ্ন করতে চাই সেটা হলো একটু ভেবে বলবেন আপনাদের দেওয়া বিভিন্ন তত্ব ও নির্দেশনা দেশের অর্থনীতিতে কত শত বিলিয়ন বৈদেশিক মুদ্রার সংস্থান করতে পেরেছে কিংবা দেশের জিডিপিতে আপনার অথবা আপনি যাদের জন্যে যপেন তাদের ভূমিকা শতকরা কত? 

আপনি কিংবা আপনাদের উদ্দেশ্যে জানাতে চাই ২০২৩ এর সর্বশেষ তথ্য মতে, শাহাদাৎ বরণের ৪৩ বছর পরেও শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের একক অবদানে গড়ে তোলা দুইটি খাতের অন্যতম একটি খাত; তৈরি পোশাক খাত থেকে দেশের আয় ৪৬.৯৯ বিলিয়ন ডলার(মোট রপ্তানি আয় ৫৫.৫৬ বিলিয়ন ডলার)। যা মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৪ দশমিক ৬১ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই খাত দেশের জিডিপিতে ১০.৩৫% এর উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে।

অপর একটি খাত হলো প্রবাসী অভিবাসন খাত। প্রবাসী কর্মসংস্থান থেকে সর্বশেষ অর্থবছরে বাংলাদেশের আয় ২১.৮২ বিলিয়ন ডলার যা জিডিপির ৪.৭শতাংশ।

দশকের পর দশক ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতি মূলত এই দুইটি খাতের উপর নির্ভরশীল। তৈরি পোশাক রপ্তানি ও প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স। বাংলাদেশের বর্তমানে 'প্রবাসী আয়' (রেমিট্যান্স) এবং 'তৈরি পোশাক শিল্প' (গার্মেন্টস) বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। যা জিয়াউর রহমানের একক কূটনৈতিক প্রচেষ্টায়, নিজস্ব পরিকল্পনায় তার শাসনামলে যাত্রা শুরু করেছিলো। এমনকি খাত দুটি পূর্বে কারো স্বপ্নে পর্যন্ত আসেনি। খাত দুটি সৃষ্টির ক্ষেত্রে জিয়াউর রহমানের একক কৃতিত্ব অনস্বীকার্য।

বর্তমানে বিশ্বে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান ২য়। সারা পৃথিবীতে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ খ্যাতি এনে দিয়েছে এই খাতের পণ্য। আনুমানিক ৪৪ লাখ নারী-পুরুষের সরাসরি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে এই খাতে। শ্রমজাবি প্রান্তিক নারীদেরকে এনে দিয়েছে সামাজিক মর্যাদা। 

গত দশ বছরের গড় হিসাবে মোট রপ্তানি আয়ের ৮৩ শতাংশ আসছে এ খাত থেকে। তৈরি পোশাক রপ্তানিতে জিয়াউর রহমানের গৃহিত পদক্ষেপসমূহ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলা বাংলাদেশের মূল ভিত্তি। বাংলাদেশী ট্রেডমার্ক তৈরিতে তিনিই প্রথম সক্ষম হয়েছিলেন এবং বাংলাদেশী তৈরি পোশাক প্রথম আন্তর্জাতিক বাজারে রফতানি তিনিই শুরু করেন। RMG সেক্টরে বাংলাদেশের প্রথম প্রবেশ তখনই শুরু হয়েছিলো। বাংলাদেশের প্রথম পোশাক শিল্পকারখানা তার সময়কালে স্থাপিত হয়েছিলো, যার নাম ছিলো ‘দেশ গার্মেন্টস’। জিয়াউর রহমানের কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় দক্ষিণ কোরিয়ার Daewoo কোম্পানি প্রথম পোশাক শিল্পে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেন এবং ১৯৮০ সালে তার হাতেই চট্রগ্রামে বাংলাদেশের প্রথম ইপিজেড প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। রপ্তানি ব্যবসার প্রসার ঝুকিহীন ও সহজ করতে তিনি Back to Back Letter of Credit সেবা চালু করেন এবং বন্ডেড গুদামের বিধান চালু করেন। তিনি রাষ্ট্রীয় মালিকানায় এই শিল্প পরিচালনা না করে বেসরকারী ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের পথ সুগম করে দেন,যার কারণে এই খাতের ক্রমবর্ধমান বিকাশ ঘটেছে।

গত পাঁচ দশকে দেশের অর্থনীতিতে রেমিট্যান্স গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। কর্মসংস্থান, বৈদেশিক মুদ্রা আয়, দারিদ্র্য বিমোচন, খাদ্য নিরাপত্তা, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষা এবং মানুষের জীবনমান উন্নয়নের অন্যতম ভূমিকা রাখছে প্রাবাসী অভিবাসন খাতটি। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসী আয়ে পৃথিবীর শীর্ষ দশের তালিকায় ৭ম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বলছে, ১৯৭৬ সাল থেকে শুরু হয়ে এখন পর্যন্ত এক কোটিরও বেশি বাংলাদেশি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কাজ করছেন। এ প্রবাসীরা মূলত স্বল্পশিক্ষিত। মূলত তারা গ্রামের বাসিন্দা। যারা গত সাড়ে চার দশকে ২১৭ বিলিয়ন ডলার আয় দেশে পাঠিয়েছেন।

১৯৭৬সালের পরবর্তী সময়ে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ ছিল দুই কোটি ৩৭ লাখ ডলার। ২০০০ সালে তা বেড়ে দাড়িয়েছে ১৯৫ কোটি ডলারে। বর্তমানে তা ২ হাজার ৪শ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে। সামষ্টিক অর্থনীতিতে রেমিট্যান্সের অবদান জাতীয় আয়ের ৬ শতাংশেরও বেশি। রেমিট্যান্সের কল্যাণে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে। অবাক করার বিষয় হলো বর্তমানে শুধু রেমিট্যান্সের অর্থ দিয়েই বাংলাদেশের ৬ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।

তার সফল কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় প্রবাসে জনশক্তি রপ্তানীর নতুন খাত উন্মোচিত হয়েছিল। ১৯৭৬ সালে দক্ষ শ্রমবাজার তৈরি করতে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো তিনিই প্রতিষ্ঠা করেন। প্রবাসে কাজের ব্যপকভাবে সুযোগ সৃষ্টি করতে ১৯৮১ সালে বেসরকারি সংস্থাগুলোকে অনুমতি দেন জনশক্তি রফতানিতে। বেসরকারী খাতকে সুযোগ করে দেওয়ায় এই খাতের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি এসেছে। তার শাসনামলের চার বছরে ৬০ হাজারের বেশি দক্ষ ও আধা-দক্ষ শ্রমিক সৌদি আরবে এবং মধ্যপ্রাচ্যে প্রেরিত হয়েছিল,যাদের আয়ে বৈদেশিক রিজার্ভ বৃদ্ধি পেতে থাকে।

স্বাধীনতা পরবর্তী বছরগুলোতে রিজার্ভ ছিলো শূন্যের কোটায়, পরবর্তী বছরগুলোতে রির্জাভের যে তথ্য পাওয়া যায় তা এসেছিলো বিদেশী অনুদান থেকে এবং যতসামান্য পাট রপ্তানীর আয় থেকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের রির্জাভের চাকার প্রথম ঘূর্ণি অনুভূত হয় ১৯৮০-১৯৮১ অর্থবছরে। এর আগ পর্যন্ত রির্জাভের কোন তথ্য তাদের কাছে সংরক্ষিত হয়নি।

দুর্ভিক্ষ কবলিত একটা দেশ ও ধর্ম-ভাষা-সংস্কৃতি বিভিন্ন ভেদ-বৈষম্যে বিভক্ত জাতিকে বাংলাদেশী নামক একটি জাতীয় ছাতার ছায়াতলে আনা ও দেশ গঠনে সকলকে ঐক্যবদ্ধ করা, অপরদিকে রাষ্ট্রের স্বার্বভৌমত্ব, কূটনীতি, অর্থনীতি, স্বাস্থ্যনীতি, সমাজনীতি প্রভৃতির সমন্বয় করে এগিয়ে চলা রাষ্ট্রপ্রধানের বিরোধীতা যারা করেন, তাকে ছোট করে যারা কথা বলেন তাদেরকে একদিন এ জাতি বিচারের সন্মুখীন করবেই,যদি না আপনারা আপনাদেরকে স্বীয় বিবেকের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে নিজেদেরকে শুধরে না নেন। 

বর্তমান প্রজন্ম হলো ফ্যাক্ট চেক করা প্রজন্ম আপনাদের মিথ্যে তথ্য ও অপপ্রচার শুনবে কিন্তু বিশ্বাস আনবে সত্যের উপরই, তারাই একদিন আধুনিক বাংলাদেশের জনক হিসেবে জিয়াউর রহমানকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান করবে।

একবার চিন্তা করে দেখেছেন এই দুই খাতের উপার্জন যদি না আসে, তবে এদেশের ভাগ্যে কি ঘটবে? ব্যর্থ ও পরনির্ভরশীল রাষ্ট্রকে আজ মাথা উচু করে দাড়াতে শিখিয়েছেন জিয়াউর রহমান। বাংলাদেশের অর্থনীতি চার দশকের বেশী সময় ধরে আজও মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে শুধুমাত্র জিয়াউর রহমানের গড়া অর্থনৈতিক ভীতের উপর। বিরোধীতাকারীদের উদ্দেশ্যে আমার এইটুকু নিবেদেন যতদিন না আপনারা এই দুই খাতের বিকল্প অন্তত একটি খাত তৈরি করতে না পারছেন ততোদিন পর্যন্ত অন্তত জিয়াউর রহমানের অবদানকে স্বীকার করে মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনায় প্রার্থনা করবেন।

লেখকঃ এস,এম গালিব ইমতেয়াজ নাহিদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, স্বেচ্ছাসেবক দল, কেন্দ্রীয় সংসদ।