বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ফেরত দেওয়ার কারণ জানালেন জাকির তালুকদার
সোমবার, ২৯ জানুয়ারী, ২০২৪ ০৫:৪৫ পিএম | আপডেট: সোমবার, ২৯ জানুয়ারী, ২০২৪ ০৫:৪৫ পিএম
দশ বছর পর বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারের অর্থ ও সম্মাননা স্মারক নাটোর থেকে কুরিয়ারের মাধ্যমে বাংলা একাডেমিকে ফেরত পাঠিয়েছেন জাকির তালুকদার। গতকাল রোববার (২৮ জানুয়ারি) নিজের ভেরিফাইয়েড ফেসবুকে এক পোস্টে তিনি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আজ সোমবার (২৯ জানুয়ারি) পুরস্কার ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক বরাবর চিঠি ফেসবুকে দিয়ে এ বিষয়ে একটি সংযুক্তি লিখেছেন জাকির তালুকদার।
তিনি লিখেছেন, বাংলা একাডেমির সমস্যা এবং কার্যক্রম নিয়ে ১০ বছরে তিনজন মহাপরিচালকের সাথে কথা বলেছি। কখনো একা, কখনো আরও কয়েকজন লেখক-কবির উপস্থিতিতে। তাদের দুজন প্রয়াত। একজন বর্তমানের ডিজি। তারা কেউ সমস্যাগুলোকে অযৌক্তিক বলেননি। কিন্তু প্রতিকারের চেষ্টা করেছেন বলে মনে হয়নি।
কার্যনির্বাহী পরিষদের নির্বাচন খুব দরকার। গণতন্ত্রের জন্য। কিন্তু ২৫ বছর ধরে নির্বাচন দেওয়া হয় না। নির্বাচিত সদস্যের পক্ষে সম্ভব কার্যনির্বাহী পরিষদের সভায় জোরালো ভূমিকা রাখা। কিন্তু সেই সুযোগ বন্ধ করে রেখেছে বাংলা একাডেমি। পছন্দের লোকদের নিয়ে অ্যাডহক কমিটি তৈরি করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে মহাপরিচালকসহ একাডেমির কর্মচারী-কর্মকর্তারাই সর্বেসর্বা। তারাই নির্ধারণ করেন একাডেমির আলোচনা অনুষ্ঠানগুলোতে কাদের কাদের ডাকা হবে। ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দই মানদণ্ড তাদের। সেইসাথে তল্পিবাহকতাই বিশেষ গুণ। মেধা বা যোগ্যতা নয়।
প্রকাশনার ক্ষেত্রে অনামি মেধাবীদের পাণ্ডুলিপি ফেলে রাখা হয়। আবার এমন ঘটনাও ঘটেছে তেমন পাণ্ডুলিপি চুরি করে নিজের নামে প্রকাশ করেছেন একাডেমির কর্মকর্তা। বছরে একবার বার্ষিক সাধারণ সভায় সদস্যরা কিছু দাবি বা সংস্কার প্রস্তাব করার সুযোগ পান। কোনো কোনো প্রস্তাব গৃহীতও হয়। কিন্তু সেগুলো বাস্তবায়নিত হলো কি না তা পরের বছরের সাধারণ সভায় জানানো হয় না। আসলে সেগুলো হিমঘরেই পড়ে থাকে।
জাকির তালুকদার লিখেছেন, বাংলা একাডেমি পুরস্কার প্রদান কমিটির সদস্য মনোনীত করা হয় কোন প্রক্রিয়ায় তা কেউ জানে না। তবে তারা দেশের সাহিত্যজগতের বরেণ্য মানুষ, এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু তারা অধিকাংশই বয়স্ক। দেশের প্রতিনিধিত্বশীল হয়ে ওঠা লেখকদের সবার লেখা সম্পর্কে ধারণা থাকে না অনেকেরই। ফলে একাডেমির কয়েকজনের তোলা নামগুলোই পুরস্কার পায়। গত কয়েক বছর ধরে পুরস্কারের একটি প্যাটার্ন লক্ষ করা যাচ্ছে। যেমন কয়জন আমলা পাবেন পুরস্কার, বাংলা একাডেমির অন্তত একজন কর্মকর্তা পাবেন পুরস্কার, আর মহাপরিচালকের ঘনিষ্ঠ কেউ কেউ পাবেন পুরস্কার। নিশ্চয়ই যে কোনো পেশার লেখক পুরস্কার পেতে পারেন। কিন্তু যখন পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখকের চাইতে অধিকতর যোগ্য লেখককে বাদ দিয়ে পুরস্কারটা তাকে দেওয়া হয়, তখন তার সমালোচনা হবেই। অথচ একাডেমি কোনো সমালোচনায় কান দেয় না। আত্মসমালোচনা করে না। সেইসাথে দেখা যাচ্ছে কোনো কবি বা লেখকের কাজের ক্ষেত্র বাদ দিয়ে তাকে অন্য ক্যাটেগরিতে পুরস্কার দেওয়া হয়। এগুলো সবই ভব্যতার ব্যত্যয়।
তিনি লিখেছেন, ১০ বছর আমি কী করেছি? আলোচনা করেছি, সভা-সমাবেশে এসব কথা বলেছি, পত্রিকায় লিখেছি, ফেসবুকে লিখেছি অনবরত। প্রতিবাদের সর্বশেষ ধাপ পুরস্কার ফেরত দেওয়া। আমার মতো একজন লেখকের এর চেয়ে বেশি আর কোনো সামর্থ্য নেই।